ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: স্বাধীনতার প্রায় পঁচাত্তর বছর পর রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে শুরু হচ্ছে জিন ম্যাপিং। উদ্দেশ্য দ্রুত ও নিখুঁতভাবে ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করা। সৌজন্যে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এনআরএস-এর হেমাটোলজি বিভাগে এই কাজের জন্য রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে কেনা হয়েছে অত্যাধুনিক 'ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপ।'
এই বিষয়ে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা.ইন্দিরা দে জানিয়েছেন, "রাজ্যের মধ্যে একমাত্র এনআরএস হাসপাতালে ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপ কেনা হল রোগী স্বার্থে।" হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তুফান দোলুইয়ের কথায়,"এই মাইক্রোস্কোপে যে কোনও ক্যানসার কোষ শরীরের কতটা অংশে ছড়িয়েছে, তা নিখুঁতভাবে হাসপাতালেই পরীক্ষা সম্ভব হবে।" স্বাস্থ্যদপ্তরের তথ্য বলছে রাজ্যে ১.১৩ লক্ষ নাগরিক বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে ভুগছেন। এঁদের মধ্যে ৯,৫৬৬,৮২৫জন মহিলা। এর বাইরে রক্তের ক্যানসারে ভুগছে একটা শিশুদের একটা বড় অংশ।
ক্যানসারের লক্ষণ বুঝে রোগীর আদৌ ক্যানসার হয়েছে কী না তা জানতে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের বেসরকারি ল্যাবরেটরির উপর ভরসা করতে হত। যদিও সেই খরচ সরকার বহন করে। কিন্তু এবার থেকে আর বেসরকারি সংস্থার উপর ভরসা করতে হবে না। তুফানবাবু বলেন,"ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপে কোষের ডিএনএ ম্যাপিং করতে গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই খরচ আর হবে না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময়ে পরীক্ষালব্ধ তথ্য নিয়ে সংশয় হত চিকিৎসকদের মধ্যে। যে কারণে ফের পরীক্ষা করতে বলা হত। এর ফলে অর্থ খরচের পাশাপাশি খানিকটা সময়ও ব্যয় হয়। সেই সমস্যার স্থায়ী নিরসন হল নতুন মাইক্রোস্কোপের দৌলতে।"
কী কাজ করে এই মাইক্রোস্কোপ?
শরীরের যে অংশ ক্যানসার আক্রান্ত হয়েছে বলে চিকিৎসক সন্দেহ করবেন সেই অংশের কোষ থেকে ডিএনএ সংশ্লেষ করে দ্রুত বোঝা যাবে রোগের গতি প্রকৃতি। দ্বিতীয়ত, "ট্রিটমেন্ট ডিজাইন।" অর্থাৎ ফ্লুরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপ সাহায্য করবে কীভাবে কোন ধরনের চিকিৎসায় রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অথবা সেই ক্যানসার রোগী কতদিনে সুস্থ হতে পারেন। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, রোগীর জিন থেকে ডিএনএ সংশ্লেষ করে রেজাল্ট পেতে বর্তমানে বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ৭-১০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু এনআরএস হাসপাতালে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তথ্য পাওয়া যাবে।