সুপর্ণা মজুমদার: পাগল ছেলেটা। কোনও প্র্যাক্টিক্যাল সেন্স নেই। কারও কথা শোনে না। কী যে পায় এভাবে বারবার ছুটে গিয়ে? একটা সাড়হীন শরীর পড়ে রয়েছে। তার সঙ্গে নাকি কথা বলে! ভালবাসে! এ কেমন ভালবাসা? ভালবাসা আবার এমন হয় নাকি? তাও আবার আজকের দিনে? এত সময় কোথায় মানুষের? মানছি! মানছি! ‘অক্টোবর’-এর শুরুতেই তীব্র গন্ধটা নাকে আসে। একলা রাতে নিজের দিকে চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে যায়। তা বলে রোজ রোজ ওই গন্ধের টানে গাছের তলায় গিয়ে দাঁড়ালে কী পাওয়া যাবে? একদিন তো ঋতুর পরিবর্তন হবে। শিউলি ফুলগুলো আর সিক্ত ঘাসের উপর পড়বে না। সেদিন বর্ষা এসে সব ধুয়ে নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু আবার কুয়াশামাখা সকালের আশা তো থেকে যাবে। ভেজা ঘাসের উপর শিউলি ফুলের ঘ্রান আবার মন মাতাবে। অপূর্ণ থেকে যাওয়ার মধ্যেই পূর্ণতা খুঁজে পায় ভালবাসা। এ কথা আবার বোঝালেন পরিচালক সুজিত সরকার। কুয়াশামাখা সকালে ভেজা ঘাসের উপর সাদা শিউলি ফুলটা পড়ে থাকার মতোই এ গল্প। রোজকার চাওয়া-পাওয়া থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য একদম আলাদা করে দিল। দিল বিচ্ছিন্নতার আনন্দ।
[জাতীয় মঞ্চে ‘ময়ূরাক্ষী’র ঢেউ, সেরা অভিনেতা ঋদ্ধি]
একবার সুজিত সরকার বলেছিলেন, মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্মতা তুলে ধরতে পছন্দ করেন তিনি। এপ্রিলের গরমে ‘অক্টোবর’-এর স্নিগ্ধতা দিয়ে মনকে জুড়িয়ে দিয়ে ঠিক এই কাজটাই করলেন পরিচালক। রোজকার চাওয়া না পাওয়ার মধ্যেই কোনওভাবে চলছিল ড্যানের জীবন। জীবনে সবকিছুর উপরই বীতশ্রদ্ধ সে। সব খারাপই যেন তাঁর সঙ্গেই হয়। এমন ধারণা নিয়েই বাঁচে সে। কিন্তু শিউলি নামের মেয়েটার হঠাৎ এমন কেন হল? ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার আগে কেন সে তাঁর খোঁজ করছিল? নিছকই কৌতূহল। কৌতূহল থেকে আগ্রহ। আগ্রহ থেকে টান। সেই অমোঘ টান যা অস্বীকার করা অসম্ভব। ভালবাসা মানেই তো কেবল পাওয়া কিংবা চাওয়া নয়। শরীর সর্বস্ব এ জীবন নয়। মন বলেও একটি বস্তু রয়েছে। সেটা আবার প্রমাণ করল ড্যান। ফিরিয়ে দিল অবোধ মনের ভালবাসার গন্ধ। যে গন্ধ তাঁর শিউলির মতোই তাজা।
করণের ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এর খোলস ছেড়ে অনেকদিনই বেরিয়ে এসেছেন বরুণ ধাওয়ান। তিনি যে কেবল পরিচালক বাবার পুত্র হিসেবে অভিনয় জগতে আসেননি তা ‘বদলাপুর’-এই প্রমাণ করেছিলেন। কিন্তু ‘অক্টোবর’ উপহার দিল অন্য বরুণ ধাওয়ান। এই ভদ্রলোক সত্যি ডিরেক্টর’স অ্যাক্টর। দিনের পর দিন সুজিত সরকার ঘুমোতে দেননি নায়ককে। বিনা তর্কে মেনে নিয়েছেন সে যন্ত্রণা। যন্ত্রণার এই অনলে পুড়ে সোনার মতো এ ছবিতে ঝলসে উঠেছেন বরুণ। সম্ভবত এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবনের সেরা পারফরম্যান্স।
[পরিচালক পরমব্রতর হাত ধরে ফের টলিউডে সৌমিত্র-তনুজা]
নবাগতা হিসেবে কোনও গ্ল্যামারাস রোল বাছতেই পারতেন বণিতা সান্ধু। তবে এমন একটা চরিত্র, যার সারা ছবিতে হাতে গোনা কয়েকটি সংলাপ রয়েছে। আর পুরো অভিনয় মুখের অভিব্যক্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে। তা করতে সত্যি এলেম লাগে। বর্তমান অভিনেত্রীদের কুর্নিশ জানাতে ইচ্ছে করে। নায়িকা হওয়ার তাগিদ ছেড়ে অভিনেত্রী হয়ে উঠেছেন তাঁরা। হয়েছেন ব্যতিক্রমী। বণিতার মায়ের চরিত্রে গীতাঞ্জলি রাওয়ের অভিনয়ে একেবারে মেদহীন। কোন চরিত্রে কতটা প্রাণের প্রয়োজন থিয়েটার শিল্পীদের তা বোধহয় নখদর্পণে থাকে।
‘অক্টোবর’-এর শুরুতে শিউলি ফুলের গন্ধ যাঁদের থমকে দেয়। ক্ষণিকের জন্য হলেও দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘোরাতে বাধ্য করে। তারপর সাদা ফুল ভরতি গাছের দিকে তাকালে নিস্তব্ধতায় মন ভরে যায়। তাঁদের জন্যই পরিচালক সুজিত সরকারের এ বাস্তবে চলমান চিত্র।
[নাচে প্রভু দেবাকেও টক্কর দিলেন শাহিদের ভাই ইশান খট্টর]
The post শিউলি ফুলের গন্ধ থমকে দেয়? তাহলে ‘অক্টোবর’-এর স্নিগ্ধতা মন কাড়বে appeared first on Sangbad Pratidin.