রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: আকাশে-বাতাসে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ও কাশের দোলা জানান দিচ্ছে পুজো আসছে। আর কটাদিন পরই শোনা যাবে ঢাকের বাদ্যি। এবছর পুজোর আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর বটতলা পাড়া এলাকায়। পুরুষশূন্য গ্রামের দুর্গামণ্ডপে একধারে অবহেলায় পড়ে রয়েছে প্রতিমা। কবে বাকি কাজ হবে, কবে পড়বে রঙের পোঁচ - তা জানেন না কেউ। কারণ, গ্রাম যে ফাঁকা, মণ্ডপের দায়িত্ব কে নেবে? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে আসছে বাসিন্দাদের মনে।
সম্প্রতি বাড়ির পিছনের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র স্বর্ণাভ বিশ্বাসের দেহ। বালক খুনে জড়িত সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় এক দম্পতির। বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে ওই দম্পতিকে বটতলা মণ্ডপের সামনে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়। গণপিটুনির ঘটনায় পুলিশ গ্রামের প্রায় ২০০ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ধরপাকড় করছে। তার জেরেই ঘরছাড়া বহু পরিবার। এদিকে, মণ্ডপের সামনে যেখানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে সেখানে পুলিশের ঘেরাটোপ। সামনে ও পাশে পুলিশ পিকেট। দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে, মণ্ডপের ভিতরে দুর্গাপ্রতিমা। ঘটনার আগে সেই প্রতিমা গড়ার কাজ চলছিল। কিন্তু শনিবারের পর ওই তল্লাটে কারও দেখা মেলেনি।
তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর বটতলা পাড়া এলাকার প্রতিমা
মণ্ডপ সংলগ্ন এক বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে ছোট ছেলেকে নিয়ে বসে রয়েছেন এর তরুণী। তিনি জানালেন, "কে দায়িত্বে আছে জানি না। বাড়িতে কেউ নেই।" সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন এক কৃষক। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি চুপিসারে বলেন, "কেউ নেই গ্রামে। আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।" সকলেই যেন এখনও আতঙ্কিত। একই অবস্থা স্বর্ণাভর স্কুল নিশ্চিন্তপুর নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। স্কুল একেবারে পড়ুয়াশূন্য। রাস্তা দিয়ে দূরের গ্রামে যাওয়ার কয়েকটি গাড়ি যাতায়াত করলেও বাকি সময় গ্রাম ছিল পুরোপুরি নিস্তব্ধ। কবে এই পরিস্থিতি কাটবে, জানেন না কেউই। এদিকে, বালক খুনের ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছিল। তার মধ্যে এক দম্পতি মৃত। চারজন ধৃত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তম অভিযুক্ত নিশা মণ্ডল এখনও চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
