শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ভূত চতুর্দশীতে ভূতেদের ভোগ দেওয়া হয় আসানসোলে! একদিনের জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাদের। কালীপুজোর রাতে 'তেনাদের' ফের মন্ত্রবলে বেঁধে ফেলা হয়। এমনই বিশ্বাস আসানসোলের মহিশীলা কলোনীর বাসিন্দাদের। এই পরম্পরাই চলে আসছে সাত দশক ধরে ।
জনশ্রুতি, আসানসোলের মহিশীলা ১ নম্বর কলোনীতে পিয়ালবেড়া শ্মশানের বটগাছে নাকি ভূতদের বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। বনমালীবাবু আজ আর জীবিত নেই। কিন্তু গাছে নাকি রয়ে গেছে ভূতেদের দল! ভূত চতুর্দশীর রাতে তাদের কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। আর কালীপুজোর রাতে ফের বন্দি করা হয় অপদেবতাদের।
বহু বছর আগে আসানসোলের রায় পরিবারের জমিদার জমি দান করেছিলেন তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে। নদিয়ার নিবাসী বনমালী ভট্টাচার্য বামাক্ষ্যাপার শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন মাত্র ৭ বছর বয়সে। তন্ত্রসাধনার জন্য তাঁকে মহিশীলার পিয়ালবেড়া শ্মশানে জমি দান করেছিলেন আসানসোল গ্রামের রায় পরিবার। তখন পিয়ালবেড়া শ্মশান ছিল জঙ্গলে ভরা নির্জন এক স্থান। অশরীরির আনাগোনা। রাতে কারওর মৃত্যু হলে ভয়ে শ্মশানে নিয়ে যেতে পারতেন না বাসিন্দারা। অপেক্ষা করতে হত সকালের জন্য। সেই নির্জনস্থানে সাধনা শুরু করেন বনমালীবাবু। শুধু তাই নয়, এলাকায় যাতে অনিষ্ট করতে না পারে তাই সমস্ত ভূতেদের একটি গাছে তিনি বেঁধে রেখে দিয়েছিলেন। এমনই কথা শোনা যায়।
সময় বদলেছে। পিয়ালবেড়া থাকলেও, আর শ্মশান নেই। সেই আশ্রমের মন্দির রয়ে গিয়েছে। আজও আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। বনমালীবাবুও মারা গিয়েছেন বহু বছর হল। তাঁর ছেলে শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন এক বছর আগে। তাঁর ভাই পিকলু ভট্টাচার্য বলেন, "কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন ভূত চতুর্দশীতে সেখানে কালীপুজো করা হয়। মায়ের বীজমন্ত্রের পুজো হয়। শিবাভোগ ও ভৈরব ভোগ দেওয়া হয় পুজোর পরে। সেই ভোগ থাকে মদ ও মাংস। গাছের দুই পিশাচ শিবানী ও শঙ্করীকে ডাকা হয়। তারা ভোগ খেয়ে চলে যায়। কালীপুজোর পরে সেই ভূতেদের মন্ত্র বলে বেঁধে দেওয়া হয় গাছের সঙ্গে। ভূতচতুর্দশীতে এটাই নাকি পরম্পরা এখানকার।"