shono
Advertisement
Atlantis

প্রকৃতির রোষে হারিয়ে গিয়েছিল আটলান্টিস! আন্টার্কটিকাতেই ছিল সেই উন্নত সভ্যতা?

তুষার ঢেকে ফেলেছিল একসময়ের বর্ধিষ্ণু জনপদকে!
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:49 PM Dec 14, 2025Updated: 05:57 PM Dec 14, 2025

বিশ্বদীপ দে: শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন 'ছিল, নেই- মাত্র এই।' কিন্তু যা ছিল না? তা অনেক সময় থেকে যায় শতকের পর শতক পেরিয়ে! যেমন আটলান্টিস। সেই কবে দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন প্রাচীন যুগের এক আশ্চর্য সভ্যতার কথা! তখন থেকেই লোকশ্রুতি হয়ে রয়ে গিয়েছে লুপ্ত এক সভ্যতার গল্প! 'গল্প'? তা নিয়ে ধন্ধ রয়েছে। রয়েছে পক্ষে, বিপক্ষে নানা মত। কেউ কেউ এমন বলেছেন, আজকের আন্টার্কটিকাই নাকি সেদিনের আটলান্টিস। তুষার ঢেকে ফেলেছিল একসময়ের বর্ধিষ্ণু এক জনপদকে! রয়েছে আরও নানা 'দাবি'! কিন্তু আসল সত্যিটা কী?

Advertisement

এর সূচনা, আগেই বলেছি প্লেটোর সময়ে। সেটা ৩৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। কিংবদন্তি গ্রিক দার্শনিকের বর্ণনায় উঠে এল এক আশ্চর্ষ দ্বীপ সভ্যতার কথা। যা ছিল তাঁর সময়ের ৯ হাজার বছর আগে। প্লেটোর দাবি, 'পিলার্স অফ হারকিউলিস'-এর (যা আজ পরিচিত জিব্রাল্টার প্রণালী) পিছনদিকে অবস্থিত ছিল সেই সভ্যতা। উন্নত প্রযুক্তি থেকে চোখধাঁধানো স্থাপত্য, শক্তিশালী সেনায় অত্যন্ত সম্পন্ন সভ্যতাটিকে গিলে ফেলেছিল আটলান্টিক মহাসাগর! খ্রিস্টের জন্মের ৯ হাজার ৬০০ বছর আগে।

সেই থেকে আটলান্টিস 'জীবিত' হয়ে ওঠে মানব সভ্যতার সামনে। পরবর্তী হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ভেবে এসেছে এই রহস্যময় দ্বীপ নিয়ে। সত্যিই এমন উন্নত এক জনপদ তথা সভ্যতা তলিয়ে গিয়েছিল জলের নিচে! যদি তা সত্যি হয়ে থাকে তবে নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কিন্তু আদৌ কি তা সত্যি? প্লেটো কোনও তথ্যপ্রমাণ দেননি। ফলে পরবর্তী সময়ে উঠে এসেছে নানা তত্ত্ব।

১৯৫৮ সালে চার্লস হ্যাপগুড নামে এক লেখক একটি বই লেখেন। 'আর্থস শিফটিং ক্লাস্ট'। বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। সেই বইয়ে চার্লস দাবি করেন, ১২ হাজার বছর আগে ভূত্বক স্থানান্তরিত হলে আটলান্টিস তার অবস্থান থেকে সরে যায়। সুদূর উত্তর থেকে সরে তা পৌঁছে যায় আজ যেখানে আন্টার্কটিকা ছিল সেখানে। আর এই তাপমাত্রা ও অবস্থানের তারতম্যই শেষপর্যন্ত ধ্বংস করে দেয় জনবহুল এক সভ্যতাকে! ধীরে ধীরে বরফ গিলে নেয় গোটা দ্বীপকেও। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, হ্যাপগুডের তত্ত্বটি এমন এক সময়ে সামনে এসেছিল যখন টেকটনিক প্লেট সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু সেই সময়ই ভূত্বকের স্থানান্তরের এই দাবি করেছিলেন তিনি।

তবে আটলান্টিস সম্পর্কে আরও এক আশ্চর্য দাবিও রয়েছে। সেখানে এক রহস্যের সঙ্গে মিশে গিয়েছে আরেক রহস্য। যে রহস্যের নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। যাকে ঘিরে রয়েছে হাজারও কাহিনি। বহু জাহাজ, বিমান নাকি 'উবে' যায় সেখানে গেলে। চার্লস বারলিৎজ নামের এক ব্যক্তি গত শতকের সাতের দশকে দাবি করেন বাহামাসের কাছে অবস্থিত আটলান্টিসকেও গিলে খেয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলই। আর এর সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে অনেকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন বিমিনি উপকূলে অবস্থিত আশ্চর্য প্রাচীর ও পথকে। যেগুলি প্রাচীন কোন সভ্যতার মানুষের গড়ে তোলা বলে দাবি করা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে দেখা গিয়েছে, আদৌ মনুষ্য নির্মিত নয় সেগুলি। নিতান্তই প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি।

এমনই নানা যুক্তি, নানা তত্ত্ব, নানা তথ্য! তবে শেষপর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি হল মহাসাগরের জলের তলায় বিলীন হয়ে যাওয়া। একটা আস্ত সভ্যতা তলিয়ে গিয়েছিল গভীর সমুদ্রের তলদেশে... ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। এবং বিষণ্ণও। একটা শহর মানে তো কেবল ইমারত, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, পরিষেবা নয়। যা আসল তা হল মানুষ। তাদের বেদনা, ভালোবাসা, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, আসক্তি সব মিলেমিশে তৈরি হওয়া অনুভূতিপুঞ্জ কোথায় বিলীন হয়ে গিয়েছে! কিন্তু সত্যিই কি ছিল আটলান্টিস? অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞানী কিন্তু তেমনটা মনে করেন না। 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' আলাদা। কিন্তু যুক্তি-তথ্যের মিশেলে যাঁরা ভেবেছেন তাঁরাই মেনে নিয়েছেন আটলান্টিস আসলে এক জায়গাতেই ছিল। সেটা প্লেটোর হৃদয়! আদর্শ সভ্যতার কথা বলতে গিয়ে তিনি ওই সভ্যতা 'সৃষ্টি' করেছিলেন। সেই সঙ্গে এও বোঝাতে চেয়েছিলেন, মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমা ছাড়িয়ে গেলে ঈশ্বর শাস্তি দেন। অর্থাৎ আটলান্টিস আদপে একটা 'ধারণা'!

আর এর সপক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি হল প্লেটোর সমসাময়িক সকলেই আটলান্টিস সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব। তাঁদের লেখায় কখনও সেই লুপ্ত জনপদের প্রসঙ্গ উঠে আসেনি। তার চেয়েও বড় কথা, আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও কিন্তু সমুদ্রের তলদেশে এমন কোনও বিলুপ্ত জনপদের চিহ্নটুকুও খুঁজে পাননি। অর্থাৎ 'লকনেস মনস্টার' কিংবা 'ইয়েতি'র মতো আটলান্টিসও আসলে এক কল্পনা। সেই কল্পদেশ তাই না থেকেও রয়ে যাবে। কল্পনার কোনও সমাপ্তি নেই। তা অনন্ত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সেই কবে দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন প্রাচীন যুগের এক আশ্চর্য সভ্যতার কথা!
  • তখন থেকেই লোকশ্রুতি হয়ে রয়ে গিয়েছে লুপ্ত এক সভ্যতার গল্প!
  • তা নিয়ে ধন্ধ রয়েছে। রয়েছে পক্ষে, বিপক্ষে নানা মত।
Advertisement