সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্কুলের গাড়ি তাকে নিয়ে যায়নি। এদিকে বাড়ি থেকে ১৮ কিমি দূরে ওই স্কুলে সে যাবে কীভাবে? প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটল ওই খুদে। রাস্তায় বসে একাই অবরোধ শুরু করে। মাঝ রাস্তায় স্কুল ব্যাগ আঁকড়ে এক স্কুলছাত্রী বসে আছে চুপচাপ। ঘটনা দেখে হতবাক হয়ে ভিড় জমাতে শুরু করে স্থানীয়রা। কেউ কেউ তাকে রাস্তা থেকে উঠে আসতেও বলেছিল। কিন্তু তাঁর যে নীরব প্রতিবাদ। 'একলা চলো' নীতিতে ভরসা রেখে একাই প্রতিবাদে নেমেছে সে। মিনিট ১০-২০র নয়, একটানা তিন ঘণ্টা পথ অবরোধ করে এখন শিরোনামে ওই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের বেতুল জেলা এলাকার। পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীর নাম সুরভী যাদব। শনিবার তাকে স্কুলের গাড়ি নিয়ে যায়নি। অভিযোগ, আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বহুদিন এমনভাবেই তার স্কুল যাওয়া হয় না। এদিকে স্কুলে গিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে পড়াশোনার করার প্রবল ইচ্ছে সুরভীর। শনিবারও স্কুলের গাড়ি না পেয়ে আর স্থির থাকতে পারেনি সে। চোয়াল শক্ত করে প্রতিবাদের পথেই হেঁটেছে ওই কিশোরী। পথই হল প্রতিবাদের অন্যতম প্রাঙ্গণ। সেই পথকেই বেছে নেয় সে। তবে হিংসাত্মক নয়, চোয়াল শক্ত করে মাঝ রাস্তাতেই বসে পড়ে সে।
পরনে স্কুলের পোশাক। পিঠের ব্যাগকে কোলের কাছে আঁকড়ে ধরে বছর দশেকের ওই মেয়ে বসে থাকে। রাস্তা দিয়ে গাড়িঘোড়া চলে। একটি ছোট্ট মেয়ে এভাবে রাস্তায় বসে আছে দেখে সকলেরই কৌতূহল হয়। ক্রমে ভিড়ও বাড়তে থাকে। রাস্তায় গাড়ি চলাচলও থমকে যায়। অনেকেই ছোট্ট মেয়েটিকে উঠে আসতে বলে। কিন্তু তাকে টলানো যায়নি। একভাবে সে তিনঘণ্টা রাস্তাতেই বসে থাকে। কিন্তু কেন তাকে স্কুলের গাড়ি নেয়নি? কী তার অপরাধ?
জানা গিয়েছে, সুরভী শিক্ষার অধিকার আইনের অধীনে নথিভুক্ত হয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। বাড়ি থেকে তার স্কুলের দূরত্ব ১৮ কিমি। সেজন্য স্কুলের গাড়িতেই যাওয়া-আসা করতে হয়। আর্থিক সমস্যার জন্য সুরভীর পরিবার গত দু'বছর ধরে সেই স্কুলগাড়ির ভাড়ার টাকা দিতে পারেনি। তার খেসারত এই ছাত্রীকে দিতে হয়। তাকে আর স্কুলের গাড়িতে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় না। এত দূর স্কুল বলে, পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী স্কুলও একা যেতে পারে না বলে অভিযোগ। শেষপর্যন্ত এদিন সে একাই প্রতিবাদ করে। এদিকে পথ অবরোধের কারণে দীর্ঘক্ষণ ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনার কথা জানতে পেরে চিচোলি পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই কিশোরীর সঙ্গে কথাও বলে। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও সেখানে পৌঁছে যান। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা এই বিষয়ে কথা বলবেন। এই বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়। শেষপর্যন্ত স্কুলব্যাগ নিয়ে সে তিনঘণ্টা পর উঠে দাঁড়ায়। এই অভিযোগ সম্পর্কে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী বলছে? স্কুল কর্তৃপক্ষ পরে দাবি করে, অভিভাবকরা নিজেরাই শিশুটিকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আরও অভিযোগ, ঘটনার সময় চালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। গোটা বিষয়টি শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।
