shono
Advertisement

ব্যাঙের ঘাম থেকে মানুষের রক্ত, বিদঘুটে এসব নেশার কথা জানতেন?

বিচিত্র এমন সব নেশার কথা শুনলে নেশা ছুটে যেতে পারে বহু নেশাড়ুর!
Posted: 06:51 PM Dec 05, 2020Updated: 11:32 PM Dec 05, 2020

বিশ্বদীপ দে: নেশা (Addiction)। দু’ অক্ষরের একটা শব্দ। অথচ তার জোরেই ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে’। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অননুকরণীয় উচ্চারণকেও হার মানাতে পারে এমন নেশার অভাব নেই। খোদ সুনীল-শক্তিরই এলএসডি সেবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বাঙালি পাঠকের অজানা নয়। কিন্তু সেই সব চেনা নেশাও যেন তুচ্ছ! এমনই হাবভাব কিছু মানুষের। তাঁদের বিচিত্র নেশার কথা শুনলে নেশা ছুটে যেতে পারে বহু নেশাড়ুর! নিজেদের বাস্তব দুনিয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে তাঁরা এমন সব পথ অবলম্বন করেন, ভাবাই যায় না। হালফিলে বলি তারকাদের মাদক যোগের সূত্রে বাঙালির আড্ডায় ফিরে আসছে নানা নেশার প্রসঙ্গ। তাহলে এই সব নেশার কথাই বা বাদ থাকে কেন?

Advertisement

সাবেক কলকাতার (Kolkata) ইতিহাস যাঁরা অল্পবিস্তর জানেন, তাঁদের কাছে অজানা নয় রূপচাঁদ পক্ষীর নামটা। সে এক সময় ছিল। চেনা তরলে ঠোঁট ছোঁয়াতে তীব্র আপত্তি ছিল বাগবাজার ও শোভাবাজারের সেই পাখির দলের। গুলি আর আফিম খেতেন তাঁরা। তারপর নিজেরা ‘পাখি’ হয়ে যেতেন! নেশা তো কত মানুষই করেন। কিন্তু তাঁদের মতো করে কল্পনার আকাশে ক’জন উড়ে বেড়াতে পারবেন? সে যাক। নেশার এমন আজব পরিণতিতে যতই চমক থাক, তাঁরা তো করতেন প্রচলিত নেশাই।

[আরও পড়ুন: একই খাবার নিয়ে বাড়ির সামনে হাজির ৪২ জন ডেলিভারি বয়! কারণ জানলে চমকে উঠবেন]

সেদিক থেকে শরদিন্দুর ব্যোমকেশ কাহিনির নন্দদুলালবাবু একেবারেই অন্য মেজাজের মানুষ। ‘মাকড়সার রস’ গল্প পড়তে পড়তে চমকে উঠতে হয়। দক্ষিণ আমেরিকার ট্যারান্টুলা মাকড়সার শরীর থেকে বের করে আনা রসের নেশায় মজেছিলেন বদমেজাজি সেই প্রৌঢ়। পড়ার সময় কেউ যদি এমন বিদঘুটে নেশাকে ‘গপ্পো’ ভেবে সরিয়ে রাখেন, তবে তিনি নিজেকে সত্যি থেকেও সরিয়ে রাখবেন। এমন নেশা রীতিমতো বাস্তব।

শুধু মাকড়সার রস কেন, সারা দুনিয়া ঘাঁটলে এর থেকেও অনেক বেশি আজগুবি নেশার কথা জানা যায়। ভাবতে পারেন, পয়সা খরচ করে কেউ সাপের ছোবল খাচ্ছেন? আজ্ঞে হ্যাঁ, এমন নেশাও ইহজগতে বিদ্যমান। প্রতিটি ছোবলের (Snakebite) খরচ নাকি কয়েক হাজার টাকা! সে ছোবল খাওয়ার আগে রক্তের নমুনা জমা দিতে হয়। তা পরীক্ষা করে তবেই নাকি নেশার ব্যাপারীরা সিদ্ধান্ত নেন এমন জবরদস্ত নেশা করার ক্ষমতা রয়েছে কিনা আবেদনকারীর! বছর কয়েক আগে বিহারের সমস্তিপুরে এক নেশাড়ুর কথা জানা গিয়েছিল। যিনি মদ ছাড়ার পরে গাঁজা, চরস, কাফ সিরাপে ‘ট্রাই’ করেও কাঙ্ক্ষিত ‘কিক’ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ সাপুড়ের কাছ থেকে গোখরো সাপ কিনে নিয়মিত তার আলতো ছোবল খাওয়া শুরু করেন। পরে একদিন সাপটা রেগেমেগে তার পূর্ণ হয়ে ওঠা বিষথলি ঢেলে দিয়েছিল তাঁর শরীরে! কীভাবে যেন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন মানুষটি। তারপরে কি আর তাঁর সাধ হয়েছিল ওই কালান্তক নেশা করার? কে জানে! পুরনো প্রবচন অবশ্য বলছে ‘স্বভাব যায় না ম’লে’।  

[আরও পড়ুন: চিকিৎসা বিজ্ঞানের জয়জয়কার! ২৭ বছরের পুরনো ভ্রূণ থেকে জন্মাল ফুটফুটে কন্যাসন্তান]

সাপ বললেই তারপরে চলে আসে ব্যাঙ। হ্যাঁ, তালিকায় সেও আছে। ব্যাঙের ঘাম খেয়ে নেশা করার কথা শোনা যায়! যেমন শোনা যায়, টিকটিকির লেজ শুকনো করে তার গুঁড়ো দিয়ে নেশা করার কথাও। নেশার পৃথিবী এমনই পদে পদে গা- ঘিনঘিনে চমকে ভরা। ২৬ বছরের এক তরুণীর কথা বলি। নাম তাঁর নিকোল। তিনি নিজের বাড়ির দেওয়াল ভেঙে খেতে শুরু করেছিলেন। কী করবেন! নিয়মিত দেওয়ালের চাঙড় না খেলে যে শান্তিই হয় না তাঁর! একই ভাবে টয়লেট পেপার কিংবা সোফার কুশন ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার নেশার কথাও শোনা যায়। আবার, মদ না খেয়ে কাঁচের পানপাত্র ভেঙে খাওয়ার নেশাও রয়েছে!

এবার একটা গা ছমছমে নেশার কথা শুনুন। জুলিয়া ক্যাপলেস নামের এক ভদ্রমহিলা কী নেশা করেন জানেন? মনুষ্য রক্তপানের নেশা। আজ্ঞে হ্যাঁ। খোদ ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার পাড়া পেনসিলভেনিয়াতেই বাড়ি তাঁর। মাসে আধ গ্যালন রক্ত না হলে তাঁর চলে না। মহিলা অবশ্য ঠিক স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন না। তাঁর অতিপ্রাকৃত চর্চার সঙ্গীরা স্বেচ্ছাতেই তাঁর ‘শিকার’ হন। নিয়মিত তাঁদের শরীর চুষে রক্ত খেয়েই বেঁচে আছেন জুলিয়া।

তালিকা এত সহজে শেষ হওয়ার নয়। আসলে নেশার প্রতি মানুষের অদম্য ঝোঁক আজকের নয়। প্রাচীন গ্রিক পুরাণে রয়েছে জিউসের পুত্র মদের দেবতা বাক্কাসের কথা। বাইবেলে আছে নিজের নৌকা থেকে নেমে প্রথমেই নোয়ার শ্যাম্পেন উৎপন্নকারী আঙুরের বীজ পোঁতার কথা। অদ্ভুত নেশার প্রবণতাও কিন্তু এমনই প্রাচীন‌। কিংবা এর থেকেও। মধ্য এশিয়ায় ‘অ্যামানিটা মুসকারিয়া’ নামের এক ছত্রাকের নেশার প্রচলন ছিল চার হাজার বছর আগে! যা খেলে রীতিমতো ‘হ্যালুসিনেশন’ হত।

আরও পিছিয়ে যেতে যেতে একেবারে আদিম মানুষদের আমলে পৌঁছলেও অবাক হতে হবে। মোটামুটি এক লক্ষ বছর আগে তামাক-মদ-কোকেনের থেকে বহু দূরে থাকা মানুষের ঝোঁক ছিল সূর্যের আলোর প্রতি। হ্যাঁ, রোদ্দুর! সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নাকি এমন‌ এ‌নজাইম তৈরি করে যা নেশার অচেতনতা তৈরি করতে পারে। ‘সেল’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের দাবি তেমনই।

এত বছরের প্রবণতা। এত বিপুল বৈচিত্র। কিন্তু একটা বিষয় একদম ‘কমন’। যে নেশাই হোক, তা থেকে ক্ষতি বই লাভ কিছু হয় না। সুতরাং সাধু সাবধান! তবুও একান্তই যদি নেশা করতে হয় তবে রাবড়ির করাই ভাল। এই প্রেসক্রিপশন স্বয়ং রসরাজ শিবরাম চক্রবর্তীর। তবে হ্যাঁ, তার আগেও দেখে নিতে হবে সুগার লেভেলটা নর্মাল তো?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার