অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: অসুস্থ স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে দিন তিন-চারেক আগে। কিন্তু কাউকে খবর দেওয়ার মতো ক্ষমতাও ছিল না বছর পঁচাত্তরে অসুস্থ বৃদ্ধের। তাই স্ত্রীর মৃতদেহ আগলে বসেছিলেন তিনি। শেষে পচা গন্ধ পেয়ে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা পুলিশে খবর দিলে ব্যাপারটা জানাজানি হয়। শনিবার দুপুরে হাওড়ার (Howrah) জগাছা থানার পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে বৃদ্ধার দেহ। অসুস্থ বৃদ্ধকে ভরতি করা হয়েছে হাওড়া হাসপাতালে। ঘটনা ঘিরে শোরগোল নন্দীপাড়া এলাকায়। বৃদ্ধের এই দেহ আগলে বসে থাকার ঘটনায় অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে, ৮ বছর আগে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট (Robinson Street) কাণ্ড। যেখানে দিদির দেহ এভাবেই আগলে বসেছিল মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই।
জগাছার নন্দীপাড়ায় বাস চক্রবর্তী পরিবারের। ৭৫ বছরের তুষার চক্রবর্তী ও স্ত্রী ৬৭ বছরের তপতী চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়ে বিয়ের পর থেকে মুম্বইবাসী (Mumbai)। বৃদ্ধ দম্পতি একাই থাকতেন। কিছুটা দূরে থাকতেন তুষারবাবুর ভাই নীহারকান্তি চক্রবর্তী। তিনি দাদা-বউদির খোঁজখবর রাখতেন। এরই মাঝে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেও ভরতি হয়েছিলেন তপতীদেবী। পরে বাড়ি ফিরলেও প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন।
[আরও পড়ুন: কাঁদতে কাঁদতে অভিষেকের মঞ্চে BSF-এর গুলিতে নিহত যুবকের পরিবার, মায়ের চোখ মুছিয়ে দিলেন নেতা]
তিন, চারদিন আগে নীহারকান্তিবাবু এসেছিলেন দাদার বাড়ি। দরজা ধাক্কা দিয়েও সাড়া না পেয়ে ফিরে যান। তারপর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। তারপর শনিবার সকালে বউদির মৃত্যুসংবাদ পান তিনি। এদিন সকালে নন্দীপাড়ায় সমীক্ষার কাজ করতে গিয়েছিলেন হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁরা চক্রবর্তী বাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে, ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েকদিন ধরে তাঁরা এই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন। জগাছা থানার পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখেন, ঘরের মধ্যে তপতীদেবীর মৃতদেহ পড়ে, তার পাশে বসে তুষারবাবু।
পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। বৃদ্ধ অসুস্থ তুষার চক্রবর্তীকে হাওড়া হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তুষারবাবুর ভাই নীহারকান্তি চক্রবর্তী থাকেন কিছুটা দূরে। তিনি জানান, দাদার বাড়ি এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। কিন্তু দাদা-বউদি কারও সাড়া পাননি। ফলে ফিরে যান। তারপর ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। এরপর শনিবার সকালে দুঃসংবাদ। আক্ষেপ করে নীহারবাবু বলছেন, আরও আগে খোঁজখবর নিলে হয়ত এমনটা হত না।