অভিরূপ দাস: বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র সমেত পাকাশয়ের মস্ত অংশ সটান পেট ছেড়ে নেমে অণ্ডকোষে। পাকাশয়ের অ্যামাইলোজ, মলটেজ, ল্যাকটেজ, সুক্রেজ ইত্যাদি যাবতীয় অনুষঙ্গের ভার ওই ক্ষুদ্র থলি বইবে কী করে? ফল যা হওয়ার তা-ই। দু’কেজির ব্যাগে তিন কেজির জিনিস হলে যা হয়। গোটা অণ্ডকোষটাই নেমে আসে হাঁটুতে। অবস্থা এমনই হয়েছিল প্যান্ট পরতে পারতেন না রমেশ সাহানি। বয়স পঁয়ষট্টির প্রৌঢ় লুঙ্গি পরেই থাকতেন সারাক্ষণ।
সাধারণত যে অণ্ডকোষের আকার হয় দু’ইঞ্চির মধ্যে, তা বাড়তে বাড়তে তাই ঠেকেছিল ১৫ ইঞ্চির কাছাকাছি। শিয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা রমেশ সাহানি ভরতি হন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই শল্যচিকিৎসা বিভাগে নতুন জীবন পেলেন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, আজকের নয়। বহুবছর ধরেই রমেশ সাহানির হার্নিয়া ছিল। কী এই হার্নিয়া?
মাসল বা পেশি দুর্বল হয়ে পড়লে, শরীরের ভিতরের কোনও অঙ্গ বা মেদবহুল টিস্যু আশপাশের পেশি বা সংযোজক টিস্যুর দুর্বল দেওয়াল ভেদ করে বেরিয়ে আসে। সেটাই হার্নিয়া।
[আরও পড়ুন: ভবানীপুরে দম্পতি খুনে আরও ঘনীভূত রহস্য, উধাও ২টি মোবাইল, সূত্র খুঁজছে পুলিশ]
কোনও ব্যথা না থাকায় প্রথমটায় তা ধরতে পারেননি রমেশ। পেটের সমস্ত নাড়িভুঁড়ি পেশির প্রাচীর দিয়ে বেরিয়ে নিচে নেমে এসেছিল। পুরো খালি হয়ে গিয়েছিল পেট। পেটকে বলা হয় ‘অ্যাবডোমেন’। অণ্ডকোষ যে থলিতে থাকে তাকে বলা হয় ‘স্ক্রোটাল’। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের (NRS Medical College Hospital) শল্যচিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক ডা. উৎপল দে জানিয়েছেন, দুই মিলিয়ে রমেশ সাহানির এই অসুখকে বলা হয় ‘স্ক্রোটাল অ্যাবডোমেন’। অর্থাৎ পেটের জিনিস নেমে এসেছে নিম্নাঙ্গের থলিতে। এতদিন হার্নিয়া লুকিয়ে থাকার কারণ এ অসুখের চরিত্র। সিংহভাগ হার্নিয়াতেই কোনও ব্যথা হয় না। শল্যচিকিৎসক ডা. উৎপল দে-র কথায়, ব্যথা না হওয়ার কারণে অনেকেই হার্নিয়া হলে টেরও পান না। একমাত্র ক্লিনিক্যালি (হাত দিয়ে ছুঁয়ে) এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
সহজ ছিল না অস্ত্রোপচার। পেটের সমস্ত জিনিস নিচে নেমে এসেছিল। দীর্ঘদিন খালি থাকতে থাকতে পেটের অভ্যন্তরের জায়গার সংকোচন ঘটেছিল। সাধারণ হার্নিয়ার মতো অস্ত্রোপচার এক্ষেত্রে সম্ভব ছিল না। জোর করে নাড়িভুঁড়ি পেটে ঢোকাতে গেলে রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারত। চাপ পড়ত পেটের রক্তনালিগুলোয়। ফুলে যেত হাত-পা। সবদিক বিবেচনা করে রোগীকে আগে থেকে ভরতি নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: অভিমান ভেঙে বৈঠকে আসুন, দিলীপকে বার্তা নাড্ডার, ‘নালিশ’ করার সুযোগ পাবেন বিক্ষুব্ধরাও]
শ্বাসপ্রশ্বাসের বিশেষ এক ব্যায়াম প্র্যাকটিস করানো হয় রোগীকে। এরপর নিম্নাঙ্গের একটি জায়গা কাটা হয়। দেখে নেওয়া হয় কী কী জিনিস নিচে নেমে এসেছে। এরপর লম্বা করে কাটা হয় পেট। প্রথমে হার্নিয়ার জায়গাটি মেরামত করা হয়। তারপর ‘কম্পোনেন্ট সেপারেশন টেকনিকের’ মাধ্যমে পেটের ভল্যিয়ুম বাড়ানো হয়। এই পদ্ধতিতে মাসলগুলোকে কেটে, টেনে পেটের মধ্যবর্তী অংশে নিয়ে আসা হয়। অনেকটা স্লাইডিং জানালা বন্ধ করার পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতেই বাড়ানো হয় পেটের ভলিয়্যুম। অস্ত্রোপচারে ডা. উৎপল দে-র সঙ্গে ছিলেন ডা. সুচেতা সরকার, ডা. কৃষ্ণ প্রকাশ। অ্যানাস্থেটিস্ট হিসাবে সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন ডা. অর্চনা রায়।