সৈকত মাইতি, তমলুক: নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যখন হইচই পড়েছে সারা দেশজুড়ে তখন, বামেদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন নন্দকুমারের এক অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ স্কুল শিক্ষক। লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিপুল খরচের সামান্যতমটুকু হিসাবে নিজের সঞ্চিত অর্থ থেকে সোমবার নগদ প্রায় ২০ হাজার টাকা হাতে তুলে দেন দলীয় প্রার্থীর হাতেই। আর তাতেই আশায় বুক বাঁধছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাম নেতৃত্বরা।
অন্যান্য দিনের মতো সোমবারও লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দকুমার এলাকায় প্রচার পর্বের মধ্যেই তার হাতে নগদ প্রায় কুড়ি হাজার টাকা অর্থ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নন্দকুমারের বেতালদীঘি এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক চণ্ডীচরণ প্রামাণিক। এদিন সপরিবারেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বামেদের এই নির্বাচনী প্রচারের জন্য ওই টাকা দান করেন বাম সমর্থক চণ্ডীচরণ বাবু। তিনি বলেন, ''নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সারাদেশ জুড়ে অনেক হইচই হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। বিজেপি সহ অন্যান্য দল সেই টাকা নিলেও সিপিএম পার্টি ওই টাকা নেয়নি। সেই কথা জানতে পেরেই নির্বাচনী প্রচারের স্বার্থে খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা দান করেছি।''
এদিকে বৃদ্ধ সমর্থকের এমন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসায় খুশি সিপিএম প্রার্থী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। চণ্ডীচরণ বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী বন্ডের নামে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে বিজেপি তৃণমূল সহ অন্যান্য দলগুলি। যেখানে শুধুমাত্র সিপিআই(এম)ই একমাত্র দল যারা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা নেয়নি। বরং উল্টে এই নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আজ জানতে পারছেন। চণ্ডীচরণ বাবু সেই কথা জানতে পেরে, ওঁর সাধ্যমত সাহায্য তুলে দিলেন। এভাবেই আমরা সাধারণ মানুষের সাহায্য নিয়েই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই লড়াই লড়তে চাই।
[আরও পড়ুন: ‘সত্যিটা জানা উচিত জনগণের’, শ্রীলঙ্কাকে দ্বীপ ‘উপহার’ নিয়ে কংগ্রেসকে তোপ জয়শংকরের]
প্রসঙ্গত, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে। শাসক ও বিরোধী প্রায় সমস্ত দল এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা চাঁদা গ্রহণ করলেও প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন বামেরা। এমন অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনের বিপুল খরচ সামাল দিতে সম্প্রতি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা যায় বাম নেতৃত্বকে। পাশাপাশি বিপুল এই অর্থ সাহায্যের আবেদন জানিয়ে দলীয় পাটি কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকদের কাছে আবেদন জানায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। ইতিমধ্যেই তার এই আবেদনের চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করে। এমন অবস্থায় বাম নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ সমর্থকদেরও এভাবে স্বতঃস্ফূর্ত এগিয়ে আসাতে নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক পুনরুদ্ধারে অনেকটাই আশায় বুক বাঁধছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, নির্বাচনী বন্ডের নামে কোটি কোটি টাকা বিনিময়ে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এর ফলে ক্রমাগতই লাফিয়ে দাম বাড়ছে বিভিন্ন জীবন দায়ী ঔষধ থেকে শুরু করে বিদ্যুতের বিল। আরও গরীব হচ্ছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষজন। তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে বামেদের এই লড়াই চলছে। ফলে নির্বাচনের খরচ সামাল দিতে বুথে বুথে কর্মী সমর্থকদের থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে।