সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আয়লান পারে নি, কিন্তু তিনি পেরেছেন৷ কিছুদিন আগেও তিনি জানতেন না রিও ওলিম্পিকের ঝলমলে আসরে অংশ নিতে পারবেন কি না৷ এখনও জানেন না, ওলিম্পিক থেকে সাফল্যের কোনও মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কি না৷ কিন্তু জীবনের কঠিন যুদ্ধে বহু আগেই সেরার স্বীকৃতি যেন তাঁর পাওয়া হয়ে গিয়েছে৷ তিনি উদ্বাস্তু অ্যাথলিট ইউস্রা মারদিনি৷
প্রায় প্রত্যেক অ্যাথলিটেরই জীবনে কোনও না কোনও কাহিনী থাকে৷ কিন্তু তা অনেকটাই ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প৷ দারিদ্র বা প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে আসার কাহিনী৷ কিন্তু সিরিয়ার এই অ্যাথলিটের জীবনকাহিনীতে জড়িয়ে আছে বিশ্বজোড়া এক সমস্যা৷
যুদ্ধবিধ্বস্ত দামাস্কাসে থাকা ক্রমশ অসহ হয়ে উঠছিল ইউস্রার কাছে৷ তাই সিদ্ধান্ত নেন দামাস্কাস ছেড়ে যাওয়ার৷ তুর্কি দিয়ে যাওয়ার পথে যে বোটে তাঁরা চড়েছিলেন, সেখানে বড়জোর ৬ জন উঠতে পারত৷ কিন্তু উঠেছিল ২০ জন৷ ফল যা হওয়ার ছিল তাই হল৷ তা ডোবার উপক্রম হল৷ বোটে মাত্র জনা চারেক সাঁতার জানতেন৷ তার মধ্যে ছিল ইউস্রার বোনও৷ তবে সবথেকে দক্ষ ইউস্রাই৷ উপায়ন্তর না দেখে জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি৷ একহাতে দড়ি দিয়ে বোটের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখেন৷ তারপর সাঁতার কেটে কেটে এগোতে থাকেন৷ কনকনে ঠাণ্ডা জলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটেছেন, কিন্তু নৌকার যাত্রীদের রক্ষা করেছেন বিপর্যয় থেকে৷
বিশ্বজোড়া উদ্বাস্তু সমস্যার জলজ্যান্ত প্রতীক ইউস্রা৷ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, বিভিন্ন দেশে মাথা গুঁজতে গুঁজতে অবশেষে পৌঁছন জার্মানিতে৷ তবে সেদিনের স্মৃতিতে আজও বিব্রত হন না ইউস্রা৷ বরং অনুপ্রেরণা হিসেবেই নিয়েছেন সে রাতের ঘটনাকে৷ কেননা তিনি জানেন সেদিন সাঁতার না কাটলে বাঁচতেই পারতেন না৷ ওলিম্পিক তো দূর, হয়তো ফেরাই হত না জীবনে৷ আর এ অনুভবই তাঁকে বাড়তি প্রেরণা জোগাচ্ছে ওলিম্পিকের আসরে৷ হয়তো আয়লানের মতো পরিণতি নয়, ঈশ্বর তাঁর জন্য বেছে রেখেছেন অফুরাণ প্রাণশক্তি৷
The post প্রাণে বাঁচতে টানা ৩ ঘণ্টা সাঁতরে ছিলেন এই উদ্বাস্তু ওলিম্পিয়ান appeared first on Sangbad Pratidin.