বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ৩৭০ এর অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। ভোটবাক্সে কাজ করেনি। ফলাফল থেকেই প্রমাণিত। তাই ফলাফল প্রকাশ হতেই কীভাবে জোট সরকার ফেলে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু হলো গেরুয়া শিবিরে। সরকার ফেলতে না পারলে সারা বছর যাতে অস্থিরতা তৈরি করে রাখা যায় তা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে রাখল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, উপরাজ্যপালের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভূস্বর্গের সরকার চালানোর ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী, উপরাজ্যপাল বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে পাঁচ জন বিধায়ক নির্বাচিত করতে পারেন। ফলে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে হবে ৩৪। ৯০ আসন বিশিষ্ট জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় অস্থিরতা তৈরি করতে ৩৪ সংখ্যাটা নেহাত কম নয় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কারবারিরা। পালটা হুমকি দিয়ে রেখেছে জোট শিবির।
জিতেও সরকার গঠনের পথে কাঁটা। জম্মু-কাশ্মীরে ফের মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসতে চলা ন্যাশনাল কনফারেন্সের সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে ক্ষমতাবলে পাঁচ বিধায়ক মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক করে দিলেন। কেন্দ্র এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করে পাঁচ বিজেপি সদস্যকে বিধানসভায় মনোনীত করেন, তাহলে প্রথম দিন থেকেই সরকার সংঘর্ষের পথ বেছে নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফারুক-পুত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর। তেমনটা ঘটলে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের দরজা দেখাবেন বলে সতর্ক করে দেন আবদুল্লা। বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা যদি এই মনোনয়ন দেন তাহলে অনাবশ্যক রাজনৈতিক সংঘর্ষ তৈরি হবে বলে জানান ওমর।
জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিধি অনুযায়ী, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বিধানসভায় পাঁচ সদস্যকে মনোনীত করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। বিধানসভায় বর্তমানে ৯০ জন নির্বাচিত বিধায়ক আছেন। যদি সন্দেহ অনুসারে বিজেপি থেকে পাঁচ সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে বিধানসভা ৯৫ সদস্যের হয়ে যাবে। এবং ম্যাজিক ফিগারও বেড়ে ৪৬ থেকে ৪৮ হয়ে যাবে। এনসি এবং কংগ্রেস জোটের বিধায়ক সংখ্যা ৪৯। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে মাত্র একটি বেশি আসনে টিকে থাকবে আবদুল্লা সরকার। আবদুল্লা সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ওদের পরামর্শ দেব যেন তারা যেন এরকম কাজ না করে। বিজেপির পাঁচ সদস্যকে মনোনয়ন দিলে সরকার বদলে যাবে না। কিন্তু তাহলে এটা করা হবে কেন! আপনারা কেন অপ্রয়োজনে বিরোধী আসনে অতিরিক্ত পাঁচজনকে চেয়ার দিতে যাবেন, প্রশ্ন তুলেছেন ওমর।
তিনি আরও বলেন, বিজেপি কোনওভাবেই সরকার গঠন করতে পারবে না। ওরা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছে। যেখানে আমাদের সংখ্যা এখনই ৪৯। এছাড়াও নির্দলরা আমাদের জোটে যোগ দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন। ফলে কোনওভাবেই আমাদের সরকার পড়বে না বরং সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে বলে জোর দিয়ে বলেন ওমর। তবে কেন্দ্র যদি এই পদক্ষেপ নেয় তাহলে প্রথম দিন থেকেই সংঘাতের পথে চলে যাবে সম্পর্ক। আমরা চাই কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন। কিন্তু এরকমটা হলে আমাদেরও সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া ছাড়া রাস্তা খোলা থাকবে না।