বিশ্বদীপ দে: একজন মানুষ ৫৮ বছরে পা দিলেন। যে বয়সে এককালে মানুষ বাণপ্রস্থে যেত, আজকাল অবসরের পরিকল্পনা করে, সেই সঙ্গে নানা রোগব্যাধি নিয়ে অস্থির হয়, সেই বয়সে তিনি নতুন করে জন্ম নিলেন। বৃহস্পতিবার ‘ডাঙ্কি’ (Dunki) ছবির টিজার তথা ড্রপ ১ বুঝিয়ে দিয়ে গেল, নিজের তুমুল সাফল্যকেও তুশ্চু করে নতুন ভাবে পর্দায় ফিরে আসতে পারেন বলেই তিনি শাহরুখ খান। তাঁর নিজের কথায়, তিনি ‘লাস্ট অফ দ্য স্টার্স’। শেষতম তারকা। তাই বার বার জন্ম নিতে হয় তাঁকে।
এই বছরের গোড়ায় মুক্তি পেয়েছিল ‘পাঠান’। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা একটা রক্তাক্ত মুখ উচ্চারণ করেছিল, ‘জিন্দা হ্যায়’। তুমুল সিটি, হর্ষধ্বনি পেরিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই ফিরে এসেছিলেন শাহরুখ। ‘জওয়ান’ হয়ে। পর পর দুটি ছবি। দুটিই হাজার কোটির ব্যবসা। তার চেয়েও বড় কথা, দুবারই ছবি মুক্তির পর কার্যত তা জাতীয় উৎসবের চেহারা নিয়েছিল। ছবির শেষে ক্রেডিট টাইটেল ফুটে ওঠার সময়ও মানুষ হল ছেড়ে যাচ্ছিলেন না। নিজেদের মতো করে সেলিব্রেট করেই চলেছিলেন। ২০২২ সালেও শোনা যাচ্ছিল, ‘কিং ইজ ডেড’। কে ভেবেছিল ২০২৩ সিংহগর্জন করে উঠবে ‘লং লিভ দ্য কিং’?
[আরও পড়ুন: অভিষেকের ডেডলাইন শেষের আগেই অ্যাকশন! ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি কেন্দ্রের]
কিন্তু শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan) তাঁর নতুন ছবিতে আগের জোড়া সাফল্যের সমীকরণকে বদলে ফেললেন। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত যে কোনও ছবিই আসলে পরিচালকের মাধ্যম। অভিনেতা সেখানে সেকেন্ডারি। কিন্তু শাহরুখের মতো মহাতারকার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু হলেও আলাদা। রাজকুমার হিরানি তাঁর ‘ডাঙ্কি’ ছবিতে বলবেন একদম অন্য একটা গল্প। ‘বেটে কো হাত লাগানে সে পহেলে বাপ সে বাত কর’ ধাঁচের হিরোগিরি এখানে করার সুযোগ পাবেন না জেনেও শাহরুখ এই ছবি করেছেন। টিজারের শুরুতেই আর পাঁচজনের সঙ্গে বিপন্ন শাহরুখ দৌড়চ্ছেন। ঊষর মরুভূমি। পড়ে রয়েছে কঙ্কাল। দূর থেকে বন্দুক তাক করছেন এক নির্মম চেহারার মানুষ। এই অসহায়তাকে এবার রুপোলি পর্দায় ফোটাবেন শাহরুখ। ‘মাসি’ ছবির ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ইমেজকে মুহূর্তে ধুলিসাৎ করে একদম অন্য একটা চরিত্র বেছে নিতে দুবার ভাবেননি তিনি। ৫৮ বছরের জন্মদিনে ‘ডাঙ্কি’র টিজার বুঝিয়ে দিয়ে গেল ‘কিং’ ফের জন্ম নিয়েছেন।
কেরিয়ারের শুরু থেকেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন শাহরুখ। ‘সার্কাস’ কিংবা ‘ফৌজি’র মতো সিরিয়াল তাঁর জবরদস্ত আগমনধ্বনি শোনালেও ফিল্মি পরিবার থেকে না আসা শাহরুখের বলিউডের বাদশা হয়ে ওঠাটা ছিল ভীষণই কঠিন। জুহি চাওলা যাঁকে দেখে প্রায় আঁতকে উঠেছিলেন। এই ছেলেটা নায়ক? নায়কত্বের প্রোটোটাইপ ভেঙে ফেলে কখনও ‘কভি হাঁ কভি না’র পরীক্ষায় ফেল করা সুনীল, কখনও ‘ডর’, ‘অনজাম’, ‘বাজিগর’-এর নেগেটিভ রোল… শাহরুখ ঝুঁকি নিয়েছেন শুরু থেকেই। রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে পর পর ব্লকবাস্টারের পরও সিক্স প্যাক অ্যাব নিয়ে ‘দর্দে ডিস্কো’ নেচে নয়া ইমেজ গড়েছেন।
[আরও পড়ুন: জীবিত বাবার ডেথ সার্টিফিকেট বের করে জমি দখল! কাঠগড়ায় ‘কীর্তিমান’ ৬ ছেলে]
মাঝের কয়েক বছরে ভুল ছবি নির্বাচন। ক্রমশই যেন ধূসর হয়ে উঠছিল মেগাস্টার তকমা। কিন্তু এর পর ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’… বাকিটা ইতিহাস। শাহরুখের নাকি প্রথম থেকেই শখ ছিল অ্যাকশন হিরো হয়ে ওঠার। ষাট ছুঁই ছুঁই বয়সে সেই ইমেজটাও গড়ে ফেললেন। কিন্তু তার পরই সেই ইমেজ হেলায় সরিয়ে রেখে অসহায় আক্রান্তের ভিড়ে মরুভূমিতে দৌড়ের যে দৃশ্য জন্মদিনে দেখা গেল তা বুঝিয়ে দিল নিশ্চিত সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে ফেলে নতুন নতুন সিঁড়ি গড়তে পারেন বলেই তিনি বাদশাহ। ‘লাস্ট অফ দ্য স্টার্স’। এমন মানুষের আসলে একটা জন্মদিন হতেই পারে না। প্রতিটি দিনই তাঁর কাছে ২ নভেম্বর। প্রতিটি দিনই নতুন হয়ে ওঠা। বৃহস্পতিবাসরীয় সকাল ফের তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল।