সন্দীপ্তা ভঞ্জ: Football.. Fish.. Food, এই তিনটি ইংরেজি শব্দ হলেও বাঙালি আঁতুড়ঘর থেকেই এগুলোর সঙ্গে অতিপরিচিত। ফুটবল বাঙালির রক্তে। পাতে মাছ না থাকলে সে বাঙালিই নয়। সেই খাদ্যরসিক পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি কি না মনেপ্রাণে বাঙালি, ফের একবার বাংলার চেনা ইতিহাসের অচেনা দিক তুলে ধরতে চলেছেন তাঁর ফ্রেমে। অভিনেতা দেব সেই মহাযজ্ঞের কাণ্ডারী।
দিন কয়েক আগে দীপাবলির সময়েই শোনা গিয়েছিল, যাবতীয় মান-অভিমানের পালা দূরে সরিয়ে ফের একবার এসভিএফ-এর সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন দেব। পরিচালকের আসনে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। এসভিএফের অন্যতম কর্ণধার প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি স্বয়ং টুইট করে এই সুখবর প্রকাশ্যে এনেছিলেন। দেব আর এসভিএফ যখন, তখন সেই ছবি নিয়ে বাঙালি সিনেপ্রেমীদের মধ্যে একটা কৌতূহল যে থাকবেই, তা বলাই বাহুল্য। সিনেমার গল্প কিংবা দেবের চরিত্র, কোনওটা সম্পর্কেই এযাবৎকাল মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন পরিচালক তথা প্রযোজনা সংস্থা। তবে এবার প্রকাশ্যে এল ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ম্যাগনাম অপাস’-এর যাবতীয় তথ্য।
[আরও পড়ুন: বাংলা ছবির শতবর্ষের আলোকে আত্মপ্রকাশ অরিন্দম শীলের ‘মায়াকুমারী’র ]
‘ম্যাগনাম অপাস’-ই বটে! কারণ, পরিচালকের কথায়, এই ছবি আগামী বছরের সবথেকে বড় ‘বাংলা প্রজেক্ট’ হতে চলেছে। নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারি অর্থাৎ যিনি কি না ‘ভারতীয় ফুটবলের জনক’ বলে পরিচিত, তার জীবনকাহিনি নিয়েই এবারের সিনেমা তৈরি করছেন ধ্রুব। গল্প ফেঁদেছেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল দে। আপাতত প্রি প্রোডাকশনের কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ত পরিচালক। তার মাঝেই জানালেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলেছে শুটিং। এত বড় একটা প্রজেক্ট, অতঃপর ব্যস্ততা তুঙ্গে!
“যাকে নিয়ে কেউ কোনও দিন ভাবেননি। অথচ, কত ইমপরট্যান্ট একটা রোল প্লে করেছেন ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাস তথা বাংলার ইতিহাসে। যার সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে বাঙালিয়ানা।”
ধ্রুবর মতে, “এমন কোনও বিষয় যা বাঙালির গর্বের সঙ্গে যুক্ত, তা আগাগোড়াই আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বাংলার চেনা ইতিহাসের অচেনা দিকগুলিকে উন্মোচন করার ইচ্ছে সবসময়েই চাগাড় দেয়। আসলে ২০ বছর বাইরে থেকে বাংলাকে ভীষণ মিস করেছি। তাই নিজের শিকরকে খোঁজার প্রচেষ্টা ক্রমাগতই আমার মধ্যে চলতে থাকে। সেই ভাবনা থেকেই নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারিকে নিয়ে ছবি। যাকে নিয়ে কেউ কোনও দিন ভাবেননি। অথচ, কত ইমপরট্যান্ট একটা রোল প্লে করেছেন ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাস তথা বাংলার ইতিহাসে। বাংলার ইতিহাস নিয়ে যত পর্যালোচনা করছি, দিন দিন আরও বেশি করে ততটাই বিস্মিত হচ্ছি। বাঙালি হিসেবে তত বেশি করে গর্ববোধ করছি। লুকিয়ে রয়েছে কত অজানা গল্প। যার সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে বাঙালিয়ানা।” বাংলা ইতিহাসের পরতে পরতে সুপ্ত থাকা সেই গল্পকেই সিনেম্যাটিক ফরম্যাটে জীবন্ত করে তুলতে চলেছেন ধ্রুব।
তা দেবকেই কেন বাছলেন? পরিচালকের কথায়, “নগেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে দেবের চেহারার একটা অদ্ভূত মিল রয়েছে। যারা নগেন্দ্র প্রসাদ সম্পর্কে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা নিশ্চয় তাঁর চেহারা, হাবভাবের সঙ্গে দেবের সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।” নভেম্বরের ২২ তারিখ অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘টনিক’-এর শুটিং শেষ করে ফিরছেন দেব। তারপরই ধ্রুবর ছবির জন্য কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়বেন তিনি।
দেব-এসভিএফ সংঘাতের কথা সবাই জানেন। প্রযোজনা সংস্থা হোক কিংবা দেব, রাজি করানোর উদ্যোগটা কে নিল? এপ্রসঙ্গে ধ্রুব বলেন, “আসলে মাস খানেক আগে আমি আর দেব একটা বিজ্ঞাপনের শুট করেছিলাম। আমার মাথায় তো তখন নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারি ঘুরছে। দেবকে দেখে অদ্ভূত একটা মিল খুঁজে পাই। সেসময়ই ওঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আর প্রযোজক-পরিচালক উভয়পক্ষই চায় একটা ভাল মানের ছবি তৈরি করতে। একজন অভিনেতার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না বোধ করি! আর সেই সমীকরণ যখন দু’য়ে দু’য়ে চার হয়ে যায়, তখন তো না করার আর প্রশ্নই ওঠে না!”
তাহলে কী নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারির বায়োপিক তৈরি করছেন ধ্রুব? না এ ছবি ঠিক বায়োপিক নয়। তবে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে একজন বাঙালির ‘নিষিদ্ধ’ ফুটবল পায়ে করে দৌড়নোর গল্প বলবেন পরিচালক। আর পিরিয়ডিক সিনেমা যখন, তখন এক্ষেত্রে যে বাংলা ইতিহাসের সেই পর্বটাকে তুলে ধরা বেশ চ্যালেঞ্জিং, তা বলাই বাহুল্য। শুটিং হবে কলকাতা এবং শহরতলীতে। সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব বর্তেছে বিক্রম ঘোষের উপর। তবে দেব ছাড়া আর কে কে থাকছেন কাস্টিংয়ে কিংবা পিরিয়ডিক এই ছবির নামই বা কী হবে, তা জানার জন্য আরও একটু তর সইতে হবে বইকী! তবে জানিয়ে রাখি, আগামী বছর গ্রীষ্মকালেই ‘ভারতীয় ফুটবলের জনক’ রূপে সিনেপর্দায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন অভিনেতা দেব। কারণ, তখনই মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি।
[আরও পড়ুন: আইনি গেরোয় ‘টেকো’, ছবি মুক্তির স্থগিতাদেশ দিল আদালত ]
The post জানুয়ারিতে শুরু শুটিং, ধ্রুবর পরবর্তী ছবির জন্য কোমর বেঁধে ময়দানে নামছেন দেব appeared first on Sangbad Pratidin.