সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষা প্রহর। দুসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও উত্তরকাশীর অন্ধকার সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আলোর মুখ দেখেননি ৪১ জন শ্রমিক। চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে তাঁদের পরিবার। টানেলের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অপেক্ষা করছেন পরিবার সদস্যেরা। চোখে ঘুম নেই। দুঃস্বপ্নের অবসানই একমাত্র প্রার্থনা। আটকে থাকা এক শ্রমিকের বাবা যেমন জানালেন, এক ছেলেকে আগেই হারিয়েছেন। জীবিত সন্তান সুড়ঙ্গ থেকে মুক্তি পেলে এখানে কাজে পাঠাবেন না।
উত্তরকাশীর (Uttar Kashi) সিল্কিইয়ারা সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মনজিত। বছর বাইশের এই শ্রমিকের বাবা লখিমপুর খেরির কৃষি শ্রমিক। মুম্বইয়ের একটি দুর্ঘটনায় এক ছেলেকে আগেই হারিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই ফের পুত্রশোকের সম্মুখীন হতে চান না তিনি। এখন কেবল তাঁর একটাই প্রার্থনা, নির্বিঘ্নে যেন ঘরে ফিরে আসে তাঁর একমাত্র সন্তান। জানা গিয়েছে, ঘটনার একদিন পরই উত্তরকাশীতে চলে এসেছিলেন মনজিতের বাবা। ঘটনাস্থলে পৌঁছতে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ৯ হাজার টাকা ঋণও করতে হয়েছে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: রক্ত জমানো ঠান্ডায় বৃষ্টির ভ্রূকুটি, উত্তরকাশীতে শ্রমিক উদ্ধারে এবার প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই]
যদিও ১৬ দিন ধরে ছেলের অপেক্ষায় শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও মনবল হারাননি মনজিতের বাবা। রবিবার প্রশাসনের তৈরি করে দেওয়া চ্যানেলের মাধ্যমে কথা হয়েছে ছেলের সঙ্গে। এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, “উদ্ধারকাজে বিলম্ব হওয়ায় চিন্তায় আছি। কিন্তু ছেলেকে বলেছি, এটা একটা যুদ্ধ। যেখানে জয় আমাদেরই হবে। ভয় পেও না।” তবে ছেলের সুস্থতার খবর পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সুড়ঙ্গ থেকে একবার বেরিয়ে এলে আর কোনওদিন ছেলেকে এখানে কাজে পাঠাবেন না। এর মধ্যে তাঁকে সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে প্রশাসন। ঋণের ৯ হাজার টাকা শোধ করে দেওয়া হয়েছে। জামা ও জুতোও দেওয়া হয়েছে।
মনজিতের বাবার মতো ‘নরককুণ্ডে’ বন্দি সব শ্রমিকের আত্মীয়রাদের মনে একটাই প্রশ্ন, কবে মুক্তি পাবেন ওঁরা? যার উত্তর এখনও অধরা। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, হয়তো বৃহস্পতিবারই ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে উদ্ধার করা যাবে শ্রমিকদের। ইতিমধ্যেই ৬ রকমভাবে উদ্ধারকাজ চালানোর পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র ও উত্তরাখণ্ড সরকার। দ্রুত গতিতে কাজ করছে ড্রিলিং মেশিনও।