সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আচ্ছা জীবনটাই যদি সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো হয়ে দাঁড়ায়? কখনও ভেবে দেখেছেন কেমন হত? লার্জার দ্যান লাইফের স্বপ্ন হয়তো অনেকেই দেখে থাকেন। আমরাও সেই তালিকা থেকে বাদ যাই না অবশ্য। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বা ভাগ্যচক্রে যদি ঠিক তার উলটোটা হয়? মানে এই ধরুন, স্বপ্নে দেখা ঝাঁ চকচকে জীবন যদি হঠাৎ ফ্যাকাশে বা পাংশু হয়ে পড়ে? দুঃখ হয়। রাগ হয়। অভিমানও হয়। স্বাভাবিক। তবে থেমে থাকলে চলবে না। বয়ে যেতে হবে সময়ের স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে। চোরাস্রোতে খাবি খেতে খেতে আবার উঠে পড়তে হবে। জীবনের সংজ্ঞা ভিন্ন জনের কাছে ভিন্ন। টুকরো টুকরো শব্দ সঞ্চয়ে তা জোড়া লাগিয়ে একটা বাক্য দাঁড় করানোর মতো নিজস্ব অভিজ্ঞতায় জীবনের সংজ্ঞা লিখতে পারাটাও কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং। ঠিক এরকমভাবেই নিজের মতো করে নিজের জীবনের সংজ্ঞা লিখে চলেছেন এক পরিচালক। একটু পরিষ্কার করে বলা যাক বরং।
নন্দনে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর করা ‘প্রবাহিনী’ নামের ছবিটি। আস্তাকুড়ে ঘেঁটে শিশি-বোতল কুড়ানো মেয়েদের রোজনামচাও আবার ঠাঁই পেয়েছে তাঁর ভাবনায়, তাঁর ফ্রেমে।
লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন-কাট! এক বিশাল বপুর আবাসন। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক দাররক্ষী। তাঁর পরিধানই তাঁর পেশার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। জীবনের সঙ্গে যুঝে চলা এই ব্যক্তির পুরো নাম সুব্রতরঞ্জন দত্ত। টলিউডে অনেকেই চেনেন তাঁকে। এখন বছর ৬২-র এক নিরাপত্তারক্ষী। আজ তাঁর এহেন পেশার নেপথ্যে কিন্তু রয়েছে এক অন্য কাহিনি। ওই যে বললাম- লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন… পরিচালকদের বুলি। তিনিও আওড়াতেন কোনও এক সময়ে। কিন্তু হাতে কাজ নেই তাই পেটের দায়ে নিরাপত্তারক্ষীর বেশে দাঁড়াতে হয়েছে আবাসনের গেটের সামনে। বেশ ক’টা ছবি করেছেন। নন্দনে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর করা ‘প্রবাহিনী’ নামের ছবিটি। আস্তাকুড়ে ঘেঁটে শিশি-বোতল কুড়ানো মেয়েদের রোজনামচাও আবার ঠাঁই পেয়েছে তাঁর ভাবনায়, তাঁর ফ্রেমে। সেই ছবির নাম ‘কলি’। তবে তা মুক্তি পায়নি। হাতে পয়সা নেই। কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’য় শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজও করেছেন। মুম্বইয়ের নামী প্রযোজনা সংস্থাতেও কাজ করতে গিয়েছিলেন। তবে সিনেমার লাইন, কখনও কাজ জোটে আবার কখনও হাতড়ালেও মেলে না কাজ! ওই কথায় বলে না, ‘এ লাইনে মরতে এয়েচো বুঝি?’ সে যাক গে, এখন কাজের অভাবে তিনি ওই আবাসনের ১২ ঘণ্টার নিরাপত্তারক্ষী। সময় পেলেই চিত্রনাট্যের খসড়া বুনতে বসেন। ছুটির দিনে পলতা থেকে দৌড়ে আসেন টলিপাড়ায়। যদি কিছু কাজ পাওয়া যায়। তবে ইন্ডাস্ট্রির দৌড়ে তিনি হয়তো পিছিয়ে পড়েছেন, তাই স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বোনা সংসারের অর্থাভাব কাটাতে রোজ ছুটতে হয় আবাসনের কাজে। কি চিত্রনাট্যের মতো ঠেকছে তো? সিনেমার মতোই বটে! তবে যে কাহিনির বর্ণনা দিলাম, তা পুরোদস্তুর বাস্তব।
[আরও পড়ুন: কে সেই ‘সাত নম্বর সনাতন সান্যাল’? খোঁজ করে বেড়াচ্ছেন কৌশিক]
সেই মানুষটি সুব্রতবাবু। এককালে দু’চারটে ছবি পরিচালনা করেছেন। তবে কাজের অভাবে এখন আবাসনের দ্বাররক্ষী। তাঁর নতুন পেশার খবরেও অনেকেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। দারোয়ান হিসেবে ভাবতে অনেকে আবার কুণ্ঠাবোধও করেছেন। তবে হাল ছাড়েননি সুব্রতরঞ্জন। কারণ, ‘দ্য শো মাস্ট গো অন!’
The post কেউ মনে রাখেনি, নিরাপত্তারক্ষীর জীবনই এখন রোজনামচা প্রবীণ পরিচালকের appeared first on Sangbad Pratidin.