গৌতম ব্রহ্ম: আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। তারপরই মর্তে মায়ের আগমন। পাঁজি অনুযায়ী ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টায় পঞ্চমী ছাড়ছে। লেগে যাচ্ছে ষষ্ঠী। ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টে ২২ মিনিটে ষষ্ঠী ছাড়ছে। যেহেতু সায়ংকালে বোধন হয় তাই ২৫ তারিখ পঞ্চমীর দিন ‘সন্ধ্যা পাচ্ছে’ ষষ্ঠী। এমনটাই জানাচ্ছে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা। ওইদিন সূর্য অস্ত যাবে ৫টা ২৯ মিনিটে। তারপরই বিল্ববৃক্ষের নিচে দাঁড়িয়ে প্রথা মেনে ঠাকুরমশাই দেবীকে আবাহন করবেন। দেবী আশ্রয় নেবেন বেল গাছের ডালে। সপ্তমীতে বেলগাছ থেকে দেবীকে ফের আবাহন করে মণ্ডপে নিয়ে আসা হবে। এটাই রীতি।
[বিজ্ঞাপনে মা দুর্গার ছবি, ক্ষমা চাইলেন হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিব]
পুজো এগিয়ে আসায় ইতিমধ্যেই সাজ সাজ রব পড়েছে পুজোকর্তা ও পুরোহিতদের মধ্যে। তৎপরতা বেড়েছে দশকর্মা ভাণ্ডারেও। আর তো মাত্র কুড়ি দিন বাকি। থিমপুজোর দৌলতে এখন অবশ্য তৃতীয়া—চতুর্থী থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায় মহানগরে। বিচারকমণ্ডলীর কনভয় চষে বেড়ায় উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম। কেউ আবার ভিড় এড়াতে সপরিবার পুজো পরিক্রমা সেরে নেন। কিন্তু পুরোহিত ও তন্ত্রধারকরা মণ্ডপে কাজ শুরু করেন ষষ্ঠী থেকে। এবার পঞ্চমীর সকাল থেকেই দশকর্মার ফর্দ মিলিয়ে বোধনের প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে। একটাই সুবিধা, মূল পুজোর আগে অনেকটা সময় পাবেন পুরোহিতরা। শিবমন্দির থেকে টালা বারোয়ারি, কেন্দুয়া শান্তি সংঘ থেকে ভবানীপুরের ‘অবসর’। সব পুজোর কর্তারাই বাড়তি সতর্ক। পুজো তো এদের কাছে অগ্নিপরীক্ষা। পরীক্ষা একদিন এগিয়ে এলে টেনশন তো হবেই। ‘অবসর’-এর শ্যামলনাথ দাস ও হাওড়ার ‘সালকিয়া ছাত্র ব্যয়াম সমিতি’-র সমর্জ্যোতি রায়, পুলক শিকদার জানালেন, “দশকর্মার বাজার একদিন আগে করতে হবে। পুরোহিতদের বাড়তি একদিনের দক্ষিণা দিতে হবে। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও পঞ্চমী থেকে করতে হবে।”
[সময়ের অনুরণনে বাঁচার প্রকৃত অর্থ খুঁজবে সেলিমপুর পল্লী]
পুরোহিত সংগঠনগুলিও সদস্যদের পঞ্চমীর বোধন নিয়ে সতর্ক করেছে। নির্ঘণ্টের যেন নড়চড় না হয়। মানিকতলা টোলের ‘বৈদিক পণ্ডিত-পুরোহিত মহামিলন কেন্দ্র’-এর সাধারণ সম্পাদক পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বোধন পঞ্চমীর সন্ধ্যায় হবে। কিন্তু অধিবাস হবে ষষ্ঠীর দুপুরে। এটা পুরোহিতদের মাথায় রাখতে হবে। কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা মর্তে এসে ফলবতী বেলগাছে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই সপ্তমীর দিন দেবীকে আবাহন করে মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বারোয়ারি মণ্ডপ বেল গাছ পাবে কোথায়? সবাই বিল্বশাখা ছেদন করে পুজোস্থলে এনে বৃক্ষজ্ঞানে বোধন সেরে নেন। শাস্ত্র বলে, দেবী আশ্রয় নেন বিল্ববৃক্ষে। ওই বৃক্ষের বেলপাতাতেই প্রাণ পায় নবপত্রিকা। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকার প্রবেশ। দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা, চক্ষুদান। দশসমুদ্রের জল আর আট রকমের তেলে দেবীর স্নান। এর আগে বেশ কয়েকবার পাঁজির গেরোয় দুর্গাপুজোর আয়ু কমেছে। কখনও সপ্তমী-অষ্টমী মিশে গিয়েছে। কখনও নবমী-দশমী। কখনও আবার পাঁজির দৌলতে দু’দিন ধরে নবমী চলেছে। এবার পঞ্চমীর দুপুরেই ষষ্ঠী লেগে যাচ্ছে। ফলে, পুজোর আয়ু কার্যত একদিন বাড়ছে। এমনটাই জানালেন ‘বঙ্গীয় পুরোহিত কল্যাণ পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
[থিমের আবহ শুধু নয়, আবহই এবার থিম কাশী বোস লেনে]
The post পাঁজির প্যাঁচে পঞ্চমীতেই এবার দেবীর বোধন, ষষ্ঠীতে অধিবাস appeared first on Sangbad Pratidin.