নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কোজাগরী পূর্ণিমার দিনেই পুজো পেলেন না লক্ষ্মী। রাজ্যের একমাত্র লক্ষ্মী মন্দির ময়ূরেশ্বরের ঘোষগ্রামে তালা বন্ধই থেকে গেল। তিথি বিভ্রাটের জেরেই নাকি এমন পরিস্থিতি বলে জানালেন মন্দিরের সেবাইত থেকে ভক্তরা।
বুধের রাত থেকে বৃহস্পতির সন্ধে পর্যন্ত কোজাগরী পূর্ণিমা ছিল। তিথি মেনে চার প্রহরে চারবার পুজো করেছেন অনেকে। নিশিযাপন করে গৃহে লক্ষ্মীর আরাধনা করেছেন ভক্তরা। কিন্তু যে গ্রামে স্বয়ং লক্ষ্মী বিরাজ করেন! সারা বছর লক্ষ্মীদেবীর মূর্তি যেখানে পুজো হয়, সেই মন্দির কোজাগরীতে নিষ্প্রদীপ রইল। মন্দিরের সেবাইত চঞ্চল রায় জানালেন, "তার জীবনে এমন কাণ্ড দেখেননি। এবার তিথি বিভ্রাটের জেরেই নাকি এটা হয়েছে। ৩৫ বছর পরে কোজাগরীর দিনে মা পুজো পেলেন না। এটা নাকি ‘ডাক সংক্রান্তি’।"
মন্দিরের অন্যতম সেবাইত গুরুচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, "প্রথা মেনে প্রতি বছর ২৮ আশ্বিন সন্ধ্যারতির পর মায়ের মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। খোলা হয় ২ কার্তিক। ভক্তদের বিশ্বাস এসময় মা পরিক্রমায় বের হন। ২৯ আশ্বিন সকালে মন্দিরের সেবাইতরা মায়ের মন্দিরের প্রদীপ থেকে ৫১টি খড়ের দড়ি পাকিয়ে পৌঁছে যান ৫১টি গ্রামে। প্রতি ঘরে সেই আগুন শিখা থেকে কৃষকদের ঘরে জ্বলে ওঠে প্রদীপ শিখা। দুদিন পরে কৃষকেরা খড়ের দড়ির ভস্ম,পুষ্প, সিঁদুর নিয়ে চাষের জমির ঈশান কোণে ধান গাছে ফুলের জন্য প্রার্থনা করে। প্রচলিত সেই রীতি ‘ডাক সংক্রান্তি’। এবছর কোজাগরী সেই ডাক সংক্রান্তিতে পড়েছে।"
এই চারদিন মন্দিরে বিশেষ আলো জ্বলে না। যতটা সম্ভব নিস্তব্ধ রাখা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, ঘোষগ্রামে এককালে ধানের গাছে সরাসরি চাল তৈরি হত। লক্ষ্মীদেবীর মন্দিরে সেই চালের গাছ রাখা আছে। দেড় হাজার বছর আগে হর্ষবর্ধনের আমলে ঘোষগ্রামে নিমগাছের তলায় থাকা ব্রহ্মচারী কামদেব গোস্বামী লক্ষ্মীদেবীর দারুমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্মীর গ্রাম হলেও কোনও বাড়িতে রাখা হয় না লক্ষ্মীর ঝাঁপি। কোজাগরীতে বিশেষ পুজোর জন্য ভক্তরা লক্ষ্মীর মন্দিরে এসে হাজির হন। এবার তা হল না। মন্দিরের সেবাইত কুনাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মন্দিরে যদি মা না থাকেন। তাহলে কাকে পুজো দেব! তাই রীতি মেনেই আমরা পুজো বন্ধ রেখেছি। আমাদের গ্রামে লক্ষ্মী পুজোই বড় পুজো।" তবে আগামী শনিবার ২ কার্তিক রীতি মেনে খুলবে মন্দিরের দরজা। কোজাগরীতে পুজোর জন্য ফের একবছরের অপেক্ষা।