সোমনাথ রায়, জম্মু: ম্যাজিক ফিগার না জুটলে জম্মু-কাশ্মীরে ‘অপারেশন লোটাস’ চালাবে না বিজেপি। হাসিমুখে বসে যাবে বিরোধী আসনে। এমনটাই খবর নাগরোটা বাইপাসে চান্নি হিম্মত চকের ধারে বিজেপির ওয়ার রুমে পরিণত হওয়া হোটেল থেকে। তাদের দাবি, দেশজুড়ে যে জাতীয়তাবাদ ইমেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি, একটিমাত্র কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য তা নিয়ে জুয়া খেলা যায় না। ফলে হাজার রকমের সমীকরণ ও যদি-কিন্তুর মধ্যে না গিয়ে প্রয়োজনে হাসিমুখে বিরোধী আসনে বসে যাবে পদ্মশিবির।
জম্মু-কাশ্মীর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপাতত যা ভবিষ্যৎবাণী করছেন বিশেষজ্ঞরা, তাতে ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমনকী এমনও হতে পারে, কোনওপক্ষই জোটাতে পারল না ম্যাজিক ফিগার। এই পরিস্থিতিতে আর যাই হোক, সরকার গঠন করার লক্ষ্যে কারও কাছে মাথা নোয়াবে না বিজেপি। কোনও দল যদি বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে চায় সেক্ষেত্রে তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা চলবে বিজেপির দেখিয়ে দেওয়া পথেই। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ৩৭০ পুনর্বহাল থেকে শুরু করে বিচ্ছিন্নতাবাদ - আগামী পাঁচ বছরে কখনও কথা মুখে আনা যাবে না। তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার ফেলে দিতেও দ্বিতীয়বার ভাববে না বিজেপি।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিজেপি? বিশেষ করে তারা যখন ভাল করেই জানে যে, অ-বিজেপি সরকার তৈরি হলে প্রথম যে প্রস্তাব পাশ হবে বিধানসভায়, তা হল ৩৭০ পুনর্বহাল ও পূর্ণ রাজ্যের দাবি। তার উপর কার্যত নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন পাশ করানোর পর সরকার গঠনের সুযোগ এভাবে হেলায় হারাবে বিজেপি? যে মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস পড়েছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের, সেখানে সরকার গঠন করবেন না মোদি-শাহরা?
বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্লার কথা শুনলেই বোঝা যাবে কেন এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিজেপি। ওয়ার রুমের তিন তলায় নিজের জন্য বরাদ্দ অফিসের সোফায় বসে বলছিলেন, “যতই প্রেস্টিজের বিষয় থাক, আমায় একটা সহজ কথা বলুন তো! গোটা দেশে, গোটা দুনিয়ায় আমাদের যে ছবি তৈরি হয়েছে, তা কি একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সরকার গঠনের জন্য বিপদে ফেলা যায়?”
প্রেম শুক্লা যখন এই কথা বলছেন, তখন পাশে বসা জম্মু-কাশ্মীর বিজেপির মুখপাত্র তথা ভারতীয় সেনার অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেল সম্মান প্রাপক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর কে শর্মা আবার বললেন অন্য কথা। “এখন মুখে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন, দেখবেন নির্বাচনের পর ঠিক আমাদের দিকে চলে আসবে ইঞ্জিনিয়ার,” বলছিলেন তিনি। এরপরই ওঠে প্রশ্ন। ঠিক যে ‘ইমেজ’ ধরে রাখতে মাথা না নোয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি, তা কি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার সঙ্গে হাত মেলালে নষ্ট হবে না? এই রশিদই তো ‘ইন্ডিয়া’-কে শর্ত দিয়েছে ৩৭০ ফেরানোর ব্যবস্থা করলে সমর্থন করবে তাদের। অভিজ্ঞ শুক্লা কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে টেনে বললেন, “ওই যে বললাম, চলতে হবে আমাদের শর্তে...”
রাজনীতিতে কাল কী হয়, তা আজ নিশ্চিত করে বলা যায় না। ক্লিশে হয়ে যাওয়া এই কথাই যেন আরও একবার মনে করিয়ে দিল প্রেম শুক্লার শেষ না হওয়া বাক্য।