বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, আমেদাবাদ: ‘একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর’।
একা নরেন্দ্র মোদিকে (PM Modi) সামলাতেই নাস্তানাবুদ অবস্থা। সঙ্গী হয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধীদের অভিযোগ, সর্বশক্তি দিয়ে গুজরাটে শাসক গেরুয়া শিবিরকে ফের ক্ষমতায় ফেরাতে সংকল্প করেছে কমিশন। যখন মোদি ঝলকানিতে চোখে হাত বিরোধী কংগ্রেস ও আপের, তখন পদ্মপক্ষের হয়ে চোখ রাঙাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও। বিরোধীদের দাবি, গোটা আমেদাবাদ শহর জুড়ে মোদি ও অমিত শাহর ছবিতে আকাশ ঢেকেছে। আর বিরোধীরা একটা পোস্টার লাগাতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেই কমিশনই। নির্বাচনী বিধির অজুহাতে প্রতিপদে জোড়াফলায় বিদ্ধ হতে হচ্ছে বিরোধী শক্তিকে। বিরোধীদের আক্ষেপ, মোদি গড়ে একজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) নেই। থাকলে রাজ্যজুড়ে ‘খেলা হত’।
[আরও পড়ুন: দিল্লির জামা মসজিদে মহিলাদের একলা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, বিতর্ক বাড়তেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার]
টানা সাতাশ বছর ক্ষমতায়। কেশুভাই প্যাটেল দিয়ে শুরু। তারপর আর থামতে হয়নি। কেশুভাইয়ের চেয়ারে বসেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। টানা ১২ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর প্রধানমন্ত্রী। ১৪ সালে তঁার ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে আট বছরে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। এখন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রবীণ ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল। প্রতি মুহূর্তে মোদির ছায়়া তাড়া করে বেড়ায় তঁাদের। এতদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে স্বভাবতই মোদি গড়ে শাসক-বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কিন্তু আমেদাবাদের খানপুরে বিজেপির কার্যালয়ে গেলে তা বোঝার উপায় নেই। ভোটের আগে শাসক শিবিরের দলীয় কার্যালয়ের চিত্র যেরকম হওয়া উচিত, এখানেও তার অন্যথা হয়নি। ব্যস্ততা চরমে। কথা বলার অবস্থায় নেই নেতারা।
এই অবস্থাতেও রাজ্য কমিটি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কুশলসিং ভাই পাডেরিয়ার সঙ্গে দু’দণ্ড কথা বলার সুযোগ হয়। বাংলা থেকে এসেছি শুনেই বঙ্গ বিজেপি সম্পর্কে খেঁাজ নিলেন। স্বভাবতই প্রসঙ্গক্রমে এলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। জানতে চাইলেন কোন জাদুকাঠিতে পরপর তিনটি নির্বাচনে ভেলকি দেখালেন তিনি। সংখ্যালঘুরা আজও কেন অন্ধের মতো ভরসা করে। মহিলারাই বা তঁার সম্পর্কে কী মতামত পোষণ করে। আবার নিজেই জানালেন বাংলায় যেমন তৃণমূলের মমতা আছে, গুজরাটে আমাদের আছে মোদিভাই, অমিত শাহজি। সব সমস্যার সমাধান নাকি মোদি একাই করে দেবেন। এতটাই ভরসা গুজরাটের মানুষের। আজ সংখ্যালঘুরাও তঁার উপরেই ভরসা রাখেন। ভোটের ফলাফল দেখলেই বুঝতে পারবেন। কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন কুশল সিং। আত্মবিশ্বাসে একটুও চিড় ধরেনি।
[আরও পড়ুন: হিমাচলে সলমন রুশদির বাড়িতে হামলা, দারোয়ানকে খুনের হুমকি]
কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল হওয়ার সুবাদে কমিশনের সাহায্যও তো মিলছে? প্রশ্ন শুনে হেসে বললেন, “মোদি প্রধানমন্ত্রী। গর্ব করে বলে গুজরাটবাসী। রাজ্যের বিরোধী নেতারাও মোদিকে নিয়ে আড়ালে আবডালে প্রশংসাই করে।” তাই গুজরাটে সরকার গড়তে কমিশন লাগে না। দাবি তঁার।
উলটো সুর অবশ্য প্রধান বিরোধী কংগ্রেস নেতাদের গলায়। প্রতি পদক্ষেপে প্রচারে কমিশন বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ নির্বাচন পরিচালন কমিটির সদস্য ও বাপুনগর কেন্দ্রের প্রার্থী হেমন্ত সিং প্যাটেলের। বিরোধীরা কোথাও কোনও হোর্ডিং বা পোস্টার লাগাতে গেলেই তা খুলে ফেলা হচ্ছে। দিল্লি থেকে পদ্মপক্ষের কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারায় কমিশন চলছে। তবু মানুষ এবার শাসকের বিরুদ্ধে থাকবে বলে শহরের সংস্কার মার্গের রাজীব গান্ধী ভবনের সামনে দঁাড়িয়ে দাবি করলেন তিনি। তবে মোদি যে ফ্যাক্টর তা-ও মানলেন। নইলে রাজ্যে বিষমদে মৃত্যু, মোরবির ঘটনা দ্রুত মানুষ ভুলে গিয়েছে। প্রচারে বেরিয়ে ফের মনে করাতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ তঁার।
তিনি স্বীকার করলেন, এই রাজ্যে কংগ্রেসে লড়াকু নেতার অভাব। যেমন বাংলায় আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন থাকলে প্রশাসন-বিরোধী হাওয়া আকাশচুম্বী করা যেত। মোদি-অমিত শাহরা ফ্যাক্টর হতেন না।