অভিরূপ দাস: ইচ্ছে ছিল। উপায় ছিল না। অবশেষে মিলল সমাধান। পচা ডিম, ড্রেনের ময়লা, বাঁদুরে বেগুনি। ত্বকের বারোটা বাজানো এমন জিনিস দিয়ে আর রং খেলতে চাইছে না পড়শি রাজ্য। বদলে তাদের পছন্দ বাংলার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবির। যা তৈরি হয় নিখাদ ফুল আর ট্যালকম পাউডার, নিমপাতা দিয়ে।
এর জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজিওনাল কাম ফেসিলিটেশন সেন্টারে জন্য বসল ক্লাস। সেখানেই অনলাইনে বিহার, ঝাড়খণ্ডের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য আয়োজিত হাতেকলমে আবির তৈরির ক্লাস। কারণ যাদবপুরের আবিরে এবার রং খেলবে বিহার, ঝাড়খণ্ড। বছরখানেক আগের কথা। দেশের মধ্যে প্রথম ফুল দিয়ে আবির তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University)। সে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল আলোর গতিতে। বাংলায় ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে এমন আবির।
পড়শি রাজ্যেও পৌঁছেছিল খবরটি। শুনে শুনে তাঁরা ভেষজ আবির বানানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হচ্ছিল না কিছুতেই। মিহি আবিরের বদলে আটার মণ্ডর মতো কিম্ভূত কিছু তৈরি করছিলেন পড়শি রাজ্যের কারিগররা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজিওনাল কাম ফেসিলিটেশন সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. সৌম্যজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, পড়শি রাজ্যের একাধিক ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি বা এফপিসি এই ধরনের আবির বানাতে চায়। কিন্তু জ্ঞানের অভাবে তারা পেরে উঠছে না। অনলাইন ক্লাসে হাতে কলমে সবকিছু শেখানো হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: রাত বাড়লেই ফ্ল্যাটে ফুর্তির ফোয়ারা, হৈমন্তীর উদ্দাম জীবনযাপনে অতিষ্ঠ ছিলেন পড়শিরা]
যাদবপুরের এই অনলাইন ক্লাসে হাজির ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক অসীম চট্টোপাধ্যায়। রিজিওনাল কাম ফেসিলিটেশন সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. সৌম্যজিৎ বিশ্বাস, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুশ মন্ত্রকের রিজিওনাল কাম ফেসিলিটেশন সেন্টারের নোডাল কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. আশিস মজুমদার। ফি-বছর দোলের পর ত্বকের সমস্যা বাড়ে মারাত্মক। অবাঙালি রাজ্যগুলোয় যে আবির দিয়ে রং খেলা হয় তাতে থাকে সীসা, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক। গুঁড়ো আবির শ্বাসনালির মাধ্যমে ফুসফুসে গেলে মারাত্মক ক্ষতি হয়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি আবির সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অসীম চট্টোপাধ্যায়ের আবিষ্কার এই আবির। তিনি জানিয়েছেন, প্রচুর পরিমাণে আবির তৈরি করতে গেলে লাগবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিক্সার গ্রাইন্ডার। ঘরোয়া রান্নায় ব্যবহৃত মিক্সি দিয়ে তা হবে না। ৩:১ অনুপাতে নিতে হবে ট্যালকম পাউডার আর অ্যারারুট। এতদিন বিহার ঝাড়খণ্ডের কারিগররা অতিরিক্ত অ্যারারুট ব্যবহার করায় আটার মণ্ডর মতো হয়ে যাচ্ছিল তাঁদের আবির। অপরাজিতা, গোলাপ, গাঁদা দিয়ে নীল, লাল, হলুদ গোলাপ তৈরি শেখানো হল অনলাইন ক্লাসে। ট্যালকম পাউডার পাওয়া যায় না বিহার ঝাড়খণ্ডে। সেখানেও ভরসা বাংলা। বড়বাজারের বর্নফিল্ড লেন থেকে ট্যালকম পাউডার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষকরা।
জেনে রাখুন ভেষজ আবির তৈরির পদ্ধতি-
ফুল, নিমপাতা, ৩:১ অনুপাতে ট্যালকম পাউডার অ্যারারুট মিশিয়ে মিক্সার গ্রাইন্ডারে দিতে হবে।
১ কেজি আবির বানাতে লাগবে ২৫০ গ্রাম অ্যারারুট, ৭৫০ গ্রাম ট্যালকম পাউডার
মিহি উপাদান পাতলা কাগজে বিছিয়ে একদিন রোদে শুকিয়ে চেলে নিতে হবে মশারির জালে।
দিতে হবে সুগন্ধী।
১ কেজি আবিরের জন্য ১০ এমএল অ্যালকোহল বেসড সুগন্ধী প্রয়োজন