সুব্রত বিশ্বাস: করোনা (Corona Virus) মহামারিতে বহু শিশু বাবা-মাকে হারিয়েছে। এদের দায়িত্ব কোনও কোনও সরকার নিতে চাইছেন। অথচ আগে থেকে অনাথ হয়ে আশ্রমে থাকা শিশু-কিশোরদের দুরাবস্থা এখনও সীমাহীন। বেলুড় লালবাবা আশ্রমের ৬৫ জন আবাসিক কোভিড পরিস্থিতিতে এখন চরম সংকটের মুখে এসে পড়েছেন। আশ্রমের নিয়ম অনুযায়ী বেলা ১২টার আগে আশ্রমে প্রবেশ করা কোনও মানুষ ও পশু অভুক্ত চলে যেতে পারবে না। এই নিয়মে বাঁধা আশ্রমটিতে এখনও ১০০-এর বেশি মানুষের আহার তৈরি হয়। কিন্ত দানধ্যানে। ফলে আর্থিক সমস্যায় আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
১৯১৭ সালে ভগতরাম বাবাজী ( যিনি লালবাবা নামে পরিচিত হন ) এই আশ্রম তৈরি করেন বেলুড় মঠের অদূরে গঙ্গার তীরে। দীন দয়ালু সাধুর আশ্রয়ে শতবর্ষেরও বেশি সময়ে এসেছেন অগনিত অনাথ শিশু। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা দানই আশ্রমের মুখ্য উদ্দেশ্য। ১৯৩৪ সালে ছাত্রাবাস গড়ে ওঠে সেখানে। পরবর্তী সময়ে লালবাবা স্কুল, কলেজ সবই তৈরি হয় বাবাজীর উদ্যোগে। পাশাপাশি এই আশ্রমে চলতে থাকে অনাথ শিশুদের গড়ে তোলার কাজ। কিন্তু আশ্রম পরিচালনার জন্য অছি পরিষদ থাকলেও তাদের দৃষ্টি নেই অনাথ আশ্রমটির উন্নতিতে। ফলে এই মহামারিতে চরম সংঙ্কটের মুখে আশ্রমটি, জানান মঠের প্রধান সেবক গুরুপ্রসাদ দাস মহান্তি। তিনি বলেন, “মূলত দান-ধ্যানের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আশ্রমটির এখন দুরবস্থা চলছে। শতাধিক মানুষের দৈনিক ভোজন তৈরি হয় রীতি মেনেই। করোনা কালে এই দান-ধ্যান কমে এসেছে অনেকটাই। বাবা-মায়ের মৃত্যু, বিয়ে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের দান এখন অনেকটাই কম। ফলে অসুবিধা হচ্ছে। সরকারি সাহায্যও নেই। আশ্রমটি পরিচালনার মূল দায়ভারের একটা অংশ গরু প্রতিপালন করে আসে। তবে গত বছর ঝড়ে সেই গোশালার দু’তলা ধ্বংস হয়ে যায়। এবারের ঝড়েও নিচের তলা বিধ্বস্ত। ফলে গরু রাখাও দায়। আশ্রমে রোজই জড়ো হন পঞ্চাশ জনের বেশি বহিরাগত ভবঘুরে মানুষজন। তাদের ভোজনের আয়োজনে ব্যস্ত আবাসিকরা। ফলে আবাসিকদেরও ফ্রন্টলাইনের কর্মী মনে করে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা উচিত বলে আবাসিকরা দাবি করেন।
[আরও পড়ুন: মালদহে আটক ‘সন্দেহভাজন’ চিনা নাগরিক, উদ্ধার প্রচুর নগদ-সহ অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র]
এ বিষয়ে বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভ্যাকসিন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে। আশ্রমিকরা টিকিট সংগ্রহ করে তা নিয়ে নিন।” ভেঙে যাওয়া আশ্রমের সাহায্য সম্পর্কে তিনি জানান, স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে জমিজমার বিষয়ে আইনি কোনও জটিলতা না থাকলে তিনি তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। শিশু থেকে কিশোর আবাসিকদের মধ্যে বেশির ভাগই উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার। এছাড়া, মেদনীপুর, বর্ধমান, বাঁকুড়াও কয়েক জন আবাসিক রয়েছেন। পরিবারের চরম কষ্টের মধ্যে থেকে একা বেরিয়ে এসে নিজেকে তৈরি করতে এখন উঠে পড়ে লেগেছে এই আশ্রমিকরা। সমস্যার সামনে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করাই এখন আশ্রমের লক্ষ্য।