সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জল্পনার অবসান। কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজনের দায়িত্ব পেল ভারত। ২০৩০ সালে শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই গেমসের। আর শতবর্ষে এই প্রতিযোগিতা বসবে নরেন্দ্র মোদির রাজ্য আহমেদাবাদেই। বুধবার, গ্লাসগোতে বার্ষিক সাধারণ সভায় আহমেদাবাদকে সিলমোহর দিয়েছে ৭৪ সদস্য দেশ।
ভারতের অলিম্পিক্স সংস্থার সভাপতি পিটি ঊষার হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। কমনওয়েলথ গেমস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এবং গুজরাট সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি প্রতিনিধি দল এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সরকারিভাবে দরপত্র জমা দিয়েছিল আগেই। লন্ডনে কমনওয়েলথ স্পোর্টের কাছে তারা এই বিড করেছিল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সাংভি। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, কমনওয়েলথ গেমসের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আহমেদাবাদকে আয়োজক শহর হিসাবে স্থান দেওয়া হয়েছে। ২৭ আগস্ট মেগা এই প্রতিযোগিতা বিড করার অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের জন্য বিড করে ভারত। আর এদিন বুধবার (২৬ নভেম্বর) কমনওয়েলথ স্পোর্টস গভর্নিং বডির বৈঠকে অনুমোদন পেয়ে গেল আহমেদাবাদ।
এমন ঘোষণার পরেই স্কটল্যান্ডের জেনারেল অ্যাসাম্বলিতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায়। ২০ জন গরবা নৃত্যশিল্পী এবং ৩০ জন ঢোল বাদক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অ্যাসাম্বলি হল আলোকিত হয়। 'নিউ এজ গেমস ফর এ নিউ সেঞ্চুরি' অর্থাৎ নতুন শতকের জন্য নতুন আঙ্গিকের গেমস, এই স্লোগানকে সামনে রেখে আহমেদাবাদকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা সকলকে মুগ্ধ করেছে। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হিসাবে ভারত এই ক্রীড়াযজ্ঞে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারিত করেছে, তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করেছিল ভারত। আয়োজক হিসাবে আহমেদাবাদ বিশ্বমানের ক্রীড়া পরিকাঠামো বহন করতে প্রস্তুত। তাছাড়াও এখানকার ক্রীড়া সংস্কৃতিও উন্নত মানের। আন্তর্জাতিক স্তরের ইভেন্ট পরিচালনার অভিজ্ঞতার জন্যও পরিচিত এই শহর। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল আয়োজিত হয়েছিল এই শহরেই। সেই কারণেই আয়োজক শহর হিসাবে আহমেদাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কমনওয়েলথ স্পোর্টসের সভাপতি ড. ডোনাল্ড রুকারে বলেছেন, "ভারতে খেলার সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধন রয়েছে। ২০৩০ সালে ১০০ বছরে পড়বে কমনওয়েলথ গেমস। আমাদের আশা, ভারতে আমরা উন্নত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিচয় আমরা দেখতে পাব। অসাধারণ একটা প্রতিযোগিতার অপেক্ষায় রইলাম।" উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে কানাডায় আয়োজিত হয়েছিল প্রথম কমনওয়েলথ গেমস।
২০৩০ সালের কমনওয়েলথ গেমস আহমেদাবেদে আয়োজনের ফলে বিরাট সংখ্যক অ্যাথলিট, কোচ, কর্মকর্তা, সমর্থক, মিডিয়া কর্মীরা ভারতে আসবেন। এতে দেশের পর্যটন, হসপিটালিটি, বাজার, পরিবহণ খাতে অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি পাবে। কমনওয়েলথ গেমস কেবল ক্রীড়া উৎসবই নয়, এতে ক্রীড়া বিজ্ঞান, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে ব্রডকাস্টিং, আইটি এবং জনসংযোগ-সহ বহু খাতে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে আহমেদাবাদে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপ ২০২৬ কোয়ালিফায়ার, কমনওয়েলথ ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান অ্যাকুয়াটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ। সামনের বছর বসতে চলেছে এশিয়ান ওয়েটলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়া প্যারা-আর্চারি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট। তাছাড়াও আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালও আহমেদাবাদেই হবে। তাই আহমেদাবাদে কমনওয়েলথ আয়োজনের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আয়োজকরা। তাছাড়াও ভারতের আগামী লক্ষ্য, ২০৩৬ সালে অলিম্পিক আয়োজন। দীর্ঘদিন ধরেই এ ব্যাপারে অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার আগে কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজন বাড়তি অক্সিজেন ভারতের জন্য।
