অভিষেক চৌধুরী, কালনা: আন্তর্জাতিক স্তরে একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন। কঠিন বাধা অতিক্রম করে জয় করেছেন পঞ্চসিন্ধু। এবার নতুন সম্মান পেতে চলেছেন সেই সায়নী দাস। জাতীয় পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে কালনার এই সাঁতারুর হাতে। ভারত সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের 'তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩' পেতে চলেছেন বাংলার মেয়ে সায়নী। আগামী ১৭ই জানুয়ারি তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মূর্মূ।
বুধবার ইমেল মারফত জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার খবর পান সায়নী। খবর পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাঁতারুর পরিবার। এর আগে রাজ্য সরকারের ‘খেলাশ্রী,’ ‘মাদার টেরেসা ইন্টারন্যাশালনাল অ্যাওয়ার্ড,’ ‘লোকমাতা রানী রাসমণি স্মারক সম্মান’-এর মত বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন সায়নী। এবার জাতীয় পুরস্কার পেলে নতুন পালক জুড়বে তাঁর মুকুটে। তাই খুশির জোয়ারে ভাসছেন কালনার বাসিন্দারাও। নয়াদিল্লির গণতন্ত্র মণ্ডপে আগামী ১৭ই জানুয়ারি পুরস্কৃত হবেন সায়নী।
কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা সায়নী দাস। মেয়ের ইংলিশ চ্যানেল জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০১৭ সালে নিজের বাড়িটিকে পর্যন্ত বন্ধক রাখতে হয় পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাসকে। কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হতেই সায়নী চ্যালেঞ্জ নেন সপ্তসিন্ধু জয়ের। মলোকাই, কুক-প্রণালী, কুক স্ট্রেইট, নর্থ চ্যানেলের মত একের পর এক ঐতিহাসিক জয়ের মধ্য দিয়ে পঞ্চসিন্ধু জয় করে বাংলা তথা দেশের মুখ উজ্বল করেন তিনি। জয় করেন ক্যাটলিনাও। নৃতত্ত্ববিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকা ২৬ বছর বয়সী সায়নী কলকাতার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের চাকরিও পান। কঠিন-কঠোর অনুশীলনের কারণে সময়ের অভাবে সেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। চলতি বছরের এপ্রিলে ষষ্ঠ সিন্ধু স্পেনের জিব্রাল্টার জয়ের লক্ষ্যে অনুশীলন শুরু করলেও সেইভাবে কোনও স্পনসর না মেলায় সমস্যায় পড়ে তার পরিবার।
অন্যদিকে গত সফরের কারণে ৫ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ঋণও রয়েছে তাঁর পরিবারের। জিব্রাল্টার সফরের জন্য ফান্ডরেইজার সাইটের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান সায়নী। এমন অবস্থায় বুধবার ভারত সরকারের ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার চিঠি পান সায়নী। পুরস্কারস্বরূপ বিভিন্ন উপহার ও স্মারকের সঙ্গে থাকছে ১৫ লক্ষ টাকা। আর্থিক প্রতিকূলতার সময় এই আর্থিক পুরস্কার জিব্রাল্টার জয়ের মুশকিল আসান বলেই মনে করছেন সায়নী, তাঁর মা রূপালী দাস ও পরিবার। তাই বিদেশের মাটিতে আরও একবার তেরঙা ওড়ানোর পক্ষে সহায়ক হবে এই অর্থ। সায়নী জানান, “প্রতিটি চ্যানেল জয়ের পর দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে একজন ভারতীয় হিসাবে আমি গর্ববোধ করেছি। এই পুরস্কার সেই জয়ের স্বীকৃতি দেওয়ায় আরও একবার গর্বিত হলাম।” পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রাণী জানান,“সায়নী দাস বাংলাকে গর্বিত করেছেন। সায়নী পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্ব। তাঁর পাশে থাকবে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।"