অর্ণব আইচ: এই গাড়িতে চড়েই ঢাকার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াতেন পাকিস্তানের সেনাকর্তা। তিনি যখন যেতেন, তখন সতর্ক হয়ে যেত পাক সেনাও। মুক্তিযোদ্ধারা যাতে কোনওমতে এই গাড়ির উপর হামলা চালাতে না পারে, সেই নজর থাকত পাক সেনাবাহিনীর। পাক সেনাকর্তার সেই অস্টিন শিরলাইন গাড়িটি এবার ‘চলবে’ কলকাতার রাস্তায়। মঙ্গলবার সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে রেড রোডে দেখা যাবে এই গাড়িটিই।
অস্টিন শিরলাইন। এই বিলাসবহুল গাড়িটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটেনে। সেখান থেকে এই গাড়িটি কিনে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠায় পাকিস্তান সরকার, যাতে ঢাকা ও অন্য জেলায় এই গাড়ি চড়েই ঘুরে বেড়াতে পারেন সেনাকর্তারা। ওই সময় পাক সরকার দু’টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনে। তার মধ্যে একটি মার্সিডিজ। অন্যটি এই অস্টিন শিরলাইন। ফোর্ট উইলিয়ামের সূত্র জানাচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বে থাকা সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির বিশেষ পছন্দের ছিল মার্সিডিজ গাড়িটি। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই অস্টিন গাড়িটিতেও চড়তেন। দু’টি গাড়িই তখন দাপিয়ে বেড়াত ঢাকার রাস্তায়। তৎকালীন ঢাকার বহু বাসিন্দাই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতেন এই দু’টি বিলাসবহুল গাড়ি।
[আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিতে ‘অস্বীকার’ নার্সিংহোমের, স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ রোগীর পরিবার]
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বহু ইতিহাস বহন করছে এই অস্টিন গাড়ি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভারতীয় সেনা। হার হয় পাক সেনাবাহিনীর। ইস্টার্ন কমান্ডের তৎকালীন জিওসি এন সি জে এস অরোরার সামনে আত্মসমর্পণ করেন পাক সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি। বাংলাদেশের জন্মের পর পাকিস্তানের পতাকা থেকে শুরু করে বহু অস্ত্রশস্ত্র আটক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তার সঙ্গে ‘ওয়ার ট্রফি’ হিসাবে ভারতীয় সেনা দখল নেয় পাক সেনাকর্তার মার্সিডিজ ও অস্টিন গাড়ি। সেগুলি ঢাকা থেকে কলকাতায় চালিয়ে নিয়ে আসা হয়।
কলকাতায় নিয়ে আসার পর ফোর্ট উইলিয়ামেই রাখা ছিল পাকিস্তানের কাছ থেকে দখল করে নিয়ে আসা এই গাড়িগুলি। গত বছর ফোর্ট উইলিয়ামের সেনাকর্তারা এগুলি সর্বসমক্ষে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গাড়িগুলি বের করে ফোর্ট উইলিয়ামের মিউজিয়ামের উলটোদিকের মাঠে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনার আমন্ত্রণে কলকাতায় আসা মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের লোকও এই গাড়ি দেখেন। এক সেনা আধিকারিক জানান, এবার যাতে কলকাতাবাসী পাক সেনাকর্তার ব্যবহার করা এই গাড়ি দেখতে পান, তার জন্য রেড রোডের কুচকাওয়াজেই রাস্তায় নামবে এই অস্টিন গাড়ি। তাতেই ফিরে আসবে ৫০ বছর আগের ইতিহাস।