সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু পরমাণু অস্ত্র নয়, জৈব অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্রেও বলীয়ান হতে চাইছে পাকিস্তান। সেজন্য তারা উপযুক্ত প্রযুক্তি হাতে পেতে, বলা ভাল ‘পাচার করতে’ মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এই দাবি জার্মান গোয়েন্দাদের। জার্মান গোয়েন্দাদের এই দাবি ও জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে।
জানা গিয়েছে, পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল ফৈয়াজ আহমেদ, প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট আসিম মুনির এসব কিছুই জানেন। তাঁদের উদ্যোগ পাকিস্তান বেআইনিভাবে ঘুর পথে পরমাণু অস্ত্র, জৈব অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নত প্রযুক্তি, কাঁচামাল, সংরক্ষণ পদ্ধতি হাতে পাওয়ার চেষ্টা করছে। চেষ্টা চলছে ২০১০ সাল থেকেই। ২০১৫ সালের পর চেষ্টাটা প্রবলভাবে বেড়েছে। এখনও একপ্রকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। আগামীদিনে পাকিস্তানের সামরিক এজেন্সিগুলির এই চেষ্টা আরও বাড়বে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। জার্মান গোয়েন্দা বিভাগ ও জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রক এই উদ্বেগ জানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
নভেম্বরের শুরুতে জার্মানির সরকার সে দেশের পার্লামেন্টে বামপন্থী দলের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তরে সরকারিভাবে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে এই তথ্যও জানিয়েছে। বামপন্থী দলের চার এমপি জার্মান সরকারকে প্রশ্ন করেছিলেন, কোনও বিদেশি রাষ্ট্র কি জার্মানি থেকে গোপনে এমন প্রযুক্তি কেনার চেষ্টা করছে যা দিয়ে পরমাণু, জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্র বানানো যায়। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রক বলেছে, ২০১০ সাল থেকে গোপনে ওই ধরনের প্রযুক্তি কেনার চেষ্টা ও প্রবণতা পাকিস্তানের বেড়েছে। প্রথমদিকে ইরান পরমাণু প্রযুক্তি কিনতে খুব উৎসাহ দেখিয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমি শক্তি জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন চালু হয়। তারপর থেকে ইরান আর ওই চেষ্টা করেনি।
জার্মান গোয়েন্দাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “জার্মানি ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশ থেকে পরমাণু প্রযুক্তি পাওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রয়াস বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি তারা এমন পণ্য সংগ্রহ করতে চায়, যা পরমাণু, জৈব ও রাসায়ানিক অস্ত্র বানাতে কাজে লাগে। আগামী দিনেও তারা ওই ধরনের পণ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে মনে হয়। পাকিস্তানের হাতে এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টি পরমাণু অস্ত্র আছে। তারা চায়, ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ২৫০টি পরমাণু অস্ত্র (নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড) তৈরি করতে। যাতে ভারত সহ গোটা দুনিয়াকে মানসিকভাবে চাপে রাখা যায়।’’
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তৎপরতা বেড়েছে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে। ভারত সরকার কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কয়েকজন মাঝারি সারির সেনা কর্তাদের ব্যাখ্যা, ভারতের সঙ্গে অস্ত্রযুদ্ধে, প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। সরাসরি যুদ্ধ বা ছায়াযুদ্ধেও এখন এঁটে উঠতে পারছে না। ফলে দুনিয়ার চোখে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে, পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে ক্ষমতার দরকষাকষির জায়গাটা আরও শক্তিশালী রাখতে, ভারতের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিতে এখন বেআইনি পথে নিষিদ্ধ অস্ত্র আমদানির চেষ্টা করছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক মহলের মতে, কাশ্মীর সহ নানা রাজনৈতিক ইসু্যতে এখন দুনিয়ার চোখে কোণঠাসা পাকিস্তান। দুনিয়ায় তাদের কথা কেউ শুনছে না। এতেই ভারতের প্রতি তাদের ‘ঘৃণা ও জেদ’ বেড়েছে। ফলে অতি-বিপজ্জনক জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলতে তৎপর তারা।
রুশ কূটনীতিকদের মতে, এমনিতেই পাকিস্তান প্রায় দেউলিয়া। আইনি পথে এবং সৎ পথে তারা যে এসব অস্ত্র প্রযুক্তি হাতে পাবে না তা তারা খুব ভাল করেই জানে। ফলে দুনিয়ার চোখে পাকিস্তানের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং বিতর্কিত ব্যক্তি’ পাক পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের দেখানো পুরনো রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে পাক সেনা। সেই রাস্তাতে যতই ঝুঁকি থাকুক না কেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে সাহায্য তুরস্কের সেনা ও গোয়েন্দারা। কারণ তুরস্ক এখন গোটা বিশ্বে পাকিস্তানের ‘একমাত্র কাছের বন্ধু’। জৈব অস্ত্র, রাসায়নিক অস্ত্র প্রযুক্তি পাকিস্তানের হাতে এলে লাভ হবে তুরস্কেরও। জার্মান গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জার্মানির প্রযুক্তি হাতে পেতে তুরস্কের সরকারি নিরাপত্তা এজেন্সি পাকিস্তানের সঙ্গে গোপন যোগাযোগের কাজটি করছে।
[আরও পড়ুন: স্বামীরা বন্দি, চিনা পুরুষদের শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করা হচ্ছে মুসলিম মহিলাদের]
The post হামলায় ছড়াবে মহামারী, বিধ্বংসী অস্ত্রের খোঁজে ‘ব্ল্যাক মার্কেটে’ ঢুঁ পাকিস্তানের appeared first on Sangbad Pratidin.