সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেসিডেন্টের গদি হারিয়েছেন। বিদ্রোহীদের কাছে নতি স্বীকার করে দেশ ছেড়েছেন। এবার দাম্পত্যেও ফাটল ধরল বাশার আল আসাদের! জানা গিয়েছে, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন আসাদের স্ত্রী আসমা। দ্রুত রাশিয়া ছেড়ে ব্রিটেনে চলে যেতে যান তিনি।
গত ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করে। আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা আসাদ বাহিনীকে হঠিয়ে আলেপ্পো, হোমস, দারার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নেয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পালটা মার দিলেও সেখানে আসাদের সেনা হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান আসাদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আসমা আল আসাদ ও তিন সন্তান হাফেজ, জেইন, করিম। তারপর থেকে রাশিয়ার আশ্রয়েই রয়েছেন তাঁরা। আসাদকে কূটনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে মস্কো। কিন্তু তাঁর চলাফেরায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
এএফপি সূত্রে খবর, মস্কোর জীবনযাপন একদমই পছন্দ হচ্ছে না আসমার। কয়েকদিন আগেই রুশ কোর্টের কাছে রাশিয়া ছাড়া অনুমতি চেয়ে বিশেষ আবেদন করেন। বর্তমানে তাঁর আবেদন খতিয়ে দেখছে রুশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্রিটেনেই কেন ফিরতে চান আসমা। জানা গিয়েছে, ১৯৭৫ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন আসমা। তাঁর অভিভাবকরা ছিলেন সিরিয়ান। ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিংয়ে পা রাখার আগে তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ফরাসি সাহিত্যে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ২০০০ সালের ডিসেম্বরে আসাদকে বিয়ে করেন আসমা। সেবছরেই বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যু হলে সিরিয়ার মসনদে বসেছিলেন আসাদ। কিন্তু জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ।
এই লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকেই নাকি সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে চলে যেতে চেয়েছিলেন আসমা। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই সিরিয়া থেকে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করার অভিযোগ উঠেছে গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে। ভারতীয় মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এমনই তথ্য প্রকাশ করে ফিনান্সিয়াল টাইমস। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বিপুল অর্থ মস্কোতেই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন আসাদ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুবার সিরিয়া থেকে রাশিয়ায় টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দুই টন ১০০ মার্কিন ডলারের বিল ও ৫০০ ইউরোর নোট রয়েছে। এই নোটগুলো মস্কোর ভনুকোভো বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে এই অর্থ বিভিন্ন রুশ ব্যাঙ্কে জমা করা হয়েছিল। এই দুবছরে আসাদের আত্মীয়রা গোপনে রাশিয়ায় নানা সম্পদ কিনেছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দেশের অর্থ বাইরে পাচার করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। সেই জন্য কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাঁর উপর। এবার ক্ষমতা হারানোর পর ঘর ভাঙতে চলেছে আসাদের।