সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এবার ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল পাকিস্তান। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে পড়শি দেশে বালোচ বিদ্রোহীদের ঘাঁটিকে নিশানা করেছে পাক ফৌজ বলে সূত্রের খবর। দিন দুয়েক আগেই পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল তেহরান। এদিন তারই বদলা নিল ইসলামাবাদ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইরানের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হামলায় চার শিশু-সহ অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বুধবার ইরানে দুটি বালোচ বিদ্রোহী সংগঠনের ঘাঁটিকে নিশানা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ ও বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি’র ছাউনিতে আছড়ে পড়ে পাক ফৌজের ক্ষেপণাস্ত্র। এই হামলায় হতাহতের কোনও খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। দিন দুয়েক আগেই পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল তেহরান। এদিন তারই বদলা নিল ইসলামাবাদ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে দুই পড়শি মুসলিম দেশের মধ্যে দাউদাউ করে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা। পাক বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, হামলায় বেশ কয়েকজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অপারেশন মার্গ বার সর্মাচার’। বিবৃতিতে ইসলামাবাদ আরও জানিয়েছে, ‘ইরানের সিয়েস্তান ও বালোচিস্তান প্রদেশে জঙ্গিদের ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আগে পাকিস্তানের জেহাদি ডেরায় মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পাকিস্তানের সবথেকে বড় প্রদেশ বালোচিস্তানে জেহাদি সংগঠন জইশ আল আদলের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ইরানের এলিট রেভোলিউশনারি গার্ড। এহেন ডামাডোলে বন্ধু তেহরানের পাশে দাঁড়িয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রকের কথায়, ‘অনেক সময় আত্মরক্ষায় এহেন পদক্ষেপ করে রাষ্ট্রগুলো। এটা আমরা বুঝি।’ ইরানের বিদেশমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন, “পাকিস্তানের জমিতে শুধুমাত্র জঙ্গিঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছি আমরা। সব দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে ইরান। তবে জাতীয় নিরাপত্তায় সঙ্গে কখনওই আপোস আমরা করব না।” এবার এই একই যুক্তি দেখিয়ে ইরানে বালোচ বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালাল ইসলামাবাদ।
[আরও পড়ুন: ইয়েমেনে হাউথি ঘাঁটিতে ফের মিসাইল হামলা আমেরিকার, মধ্যপ্রাচ্যে ছড়াচ্ছে যুদ্ধের আগুন?]
বলে রাখা ভালো, পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালাচ্ছে বালোচরা। এই বিদ্রোহীদেরই দুটি সংগঠন হচ্ছে ‘বালোচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট’ ও বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি’। তাদের লড়াই দমাতে পালটা গুমখুন, হত্যা ও ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বিদ্রোহের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরি হওয়ার পর থেকেই আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালোচিস্তান। অভিযোগ, খনিজ সমৃদ্ধ প্রদেশটিকে কার্যত লুট করছে পাক প্রশাসন। প্রতিদানে বালোচ জনতা পেয়েছে শুধু নির্যাতন ও দারিদ্র।
২০১৫-তে ইসলামাবাদ ও বেজিংয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত মউয়ের ভিত্তিতে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নির্মাণকার্য শুরু হয়েছে৷ চিনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির উপর ভিত্তি করে, তাদের অর্থ সাহায্যেই এই করিডর তৈরি হচ্ছে৷ পাকিস্তানের গদর পোর্ট থেকে চিনের শিনজিং প্রদেশ পর্যন্ত মোট ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি তৈরি করা হয়েছে৷ এই করিডর নিয়ে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন বালোচিস্তান-সহ গিলগিট-বালতিস্তান ও পিওকে-র নাগরিকরা৷ অভিযোগ, পেশিশক্তির জোরে তাঁদের বাসভূমি কেড়ে নিয়ে এই করিডর তৈরি করেছে পাকিস্তান৷ যাতে পূর্ণ মদত দিয়েছে চিন৷