গোবিন্দ সাহা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election 2023) জেলাপ্রতি মাত্র ১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে বড়সড় প্রশ্নের মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission)। সেই সঙ্গে রাজীব সিনহার উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “ভোটের কাজের চাপ সামাল দিতে না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। রাজ্যপাল নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবে।”
গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court) রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে কমিশন ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালতও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে। চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনে রাজি হয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু জেলাপ্রতি মাত্র ১ কোম্পানি করে বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। যার প্রতিবাদে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করে বিজেপি। সেই মামলাতেই হাই কোর্টের নির্দেশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব জেলায় পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতে হবে কমিশনকে।
[আরও পড়ুন: মোদির আমেরিকা সফরে ‘মানবাধিকার কাঁটা’, বাইডেনকে চিঠি কংগ্রেস সদস্যদের]
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, “২০১৩ সালে যে পরিমাণ বাহিনী মোতায়েন ছিল, তার থেকে কম বাহিনী চাইলে হবে না। বরং তার থেকে বেশি চাইতে হবে, কারণ এখন জেলার সংখ্যা বেশি।” এই মামলায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের পর্যবেক্ষণ, “কমিশন আদালতের আগের নির্দেশকে মান্যতা দেয়নি। কমিশন মূল্যায়নের কাজ সততার সঙ্গে এবং নিরপেক্ষভাবে করবে বলে আদালত আশা করে। কেন কমিশন স্বতন্ত্রভাবে কেনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট নয়।”
[আরও পড়ুন: ব্লিঙ্কেন বন্ধুত্বের কথা বললেও বেসুরো বাইডেন, ‘একনায়ক’ জিনপিংকে তোপ]
কলকাতা হাই কোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, কমিশন যে ২২ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে, সেটা নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “১৭০০ জন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত হবে? নাকি ৮০ হাজার হবে? নাকি ৮ লাখ বাহিনী লাগবে? এটা ঠিক করা কি আদালতের কাজ? আমরা তো কমিশনের ওপরই মূল্যায়নের কাজ ছেড়েছিলাম। কিন্তু তারা অযথা বিষয়টি দীর্ঘায়িত করেছে। তাই সব জেলায় বাহিনী দিতে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম। আদালতের উদ্দেশ্য ছিল গোটা পর্বের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি।”
এদিনের শুনানিতে মামলাকারী সৌম্য মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, এভাবে চোখ বুঝে কেন থাকছে কমিশন। হাইকোর্টের নির্দেশের এটা কী উদ্দেশ্য ছিল? জবাবে কমিশনের উদ্দেশে আদালত বলে, “শুরু থেকে বোঝানোর চেষ্টা করছি আপনারা নিরপেক্ষ। শেষ সিদ্ধান্ত আপনাদের নিতে হবে। ১৭০০ কোম্পানি পর্যাপ্ত নয় ২২ জেলার জন্য। হাই ফেস নির্বাচন। অন্য রাজ্য থেকে ভোটের দুদিন আগে যদি পুলিশ আসে, কীভাবে সম্ভব? অনেক সমস্যা আছে ভোটের দিন। ভাষাগত দিক থেকে কিছু রাজ্যের সেনার সমস্যা নাহলেও দক্ষিণ থেকে আসা সকলের সমস্যা হবে। আমাদের কি কমিশন কে সন্দেহ করতে হবে? চাপ রাখতে না পারলে ছেড়ে দিন রাজ্যপাল নতুন কমিশনার নিয়োগ করবেন।”