সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিকাল পাঁচটায় দীর্ঘ লাইন। তাই টোকেন ইস্যু করা হয়। আর সেই টোকেন নিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়লেন ভোটাররা। ওই ভোটাররা না আসা পর্যন্ত এজেন্ট যে নাছোড়বান্দা। তাই ভোটারদের ঘুম থেকে তুলে বুথে নিয়ে এল কেন্দ্রীয় বাহিনী!
শনিবারের পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে রাত ১১ টার পর এমন ছবি ধরা পড়েছে একাধিক বুথে। বান্দোয়ান ব্লকের কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজগ্রামের বুথে তো ভোটাররা বসে বসে ঝিমোচ্ছিলেন। বুথের ভেতর চেয়ারে বসে হাই তুলছেন প্রিসাইডিং অফিসার। কেউ আবার দুপুর ২ টো থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। রাত সাড়ে ১১টার পরেও সামনে আরও জনা ৫০। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বাঘমুন্ডি, ঝালদা দুই ব্লকের ১৪০০-র বেশি ভোটার থাকা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এমনই সমস্যায় পড়েন ভোটকর্মীরা। রাজগ্রাম বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তারকনাথ দে বলেন, “বিকাল ৫ টার সময় ৩৬৬ টা টোকেন দেওয়া হয়েছে। সেই টোকেন নিয়ে কয়েকজন রান্নাবান্না করতে ঘরে চলে যান। সাড়ে ১১ টা পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমাদের ভোট শেষ হয়নি।” হবেই বা কী করে? বান্দোয়ানের রাজগ্রাম, ঝালদা দু ‘নম্বর ব্লকের চেকার বুথ গুলিতে যে টোকেন নিয়ে ঘরে চলে যান ভোটাররা।
[আরও পড়ুন: যাত্রীদের জন্য সুখবর! কমছে দূরপাল্লার ট্রেনের ভাড়া, তালিকায় বন্দে ভারতও]
সবিতা মুর্মু তার কোলের সন্তানকে নিয়ে দুপুরেই ভোট দিতে এসেছিলেন এই বুথে। কিন্তু লম্বা লাইন থাকায় ভোট কম্পাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেননি। তার কথায়, “৫ টায় টোকেন পাই। সেই টোকেনের নম্বর ছিল অনেক পরে। ফলে কতক্ষণ আর কোলের শিশুকে নিয়ে বসে থাকব। তাই বাড়ি গিয়ে রান্নাবান্না করে এসেছি।” বাড়িতে কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন? তারপর আর কোন মুখে রা নেই। রাজগ্রামের এই বুথে মোট ভোটার ১২৩৯। দুপুর ২ টো থেকে দাঁড়িয়ে রাত সাড়ে ৯টার পরেও ভোট দিতে পারেননি জীবন মান্ডি। ছোট শিশুকে নিয়ে ১২ টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুকুরমণি মান্ডি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে টোকেন নিয়ে ৫ টার পর চলে যান। রাত ৯ টার পর এসেও লম্বা লাইন। একইভাবে রাত সাড়ে ১০ টার পরেও তিন বছরের শিশুকে নিয়ে ভোট দিতে বসে আছেন পিয়ারী মুর্মু। ছ’বছরের ছেলেকে নিয়ে আছেন শিবানি কিস্কু।
কিন্তু এত ধীর গতিতে ভোট কেন? ওই বুথ গুলির প্রিসাইডিং অফিসারের কথায়, “তিন তিনটে ব্যালট। ব্যালট পত্রের রঙ অনুযায়ী সেই বাক্সে ফেলতে হবে। এই কাজটা করতে গিয়েই থতমতো খেয়ে যাচ্ছেন ভোটাররা। ফলে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। ” কিন্তু প্রশ্ন? ক্রমান্বয়ে কেন টোকেন দেওয়া হয় না? বাঘমুন্ডির ধুনুডি হাই স্কুলের প্রিসাইডিং অফিসার কৌশিক শাখা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলির এজেন্টরা ভীষণ ঝামেলা করেন । ভোটারদের সুযোগ-সুবিধা টা আগে দেখেন। আর এই কারণেই ভোট শেষ হতে ভোর রাত হয়ে যায়। ” ঘুমিয়ে পড়েন ভোটাররা!