সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election 2023)। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার বারবার শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে একটি বিষয় উঠে আসে-নির্বাচন মানেই হিংসার লাইসেন্স নয়। এদিন সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দেন, “নির্বাচন করা মানেই হিংসা করার লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া নয়।” বিচারপতিদের বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, “অন্য রাজ্য থেকে তো পুলিশ চাইছে রাজ্য। তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে আপত্তি কোথায়?” দুপক্ষের সওয়াল জবাবের পর শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ নয়। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই।
রাজ্যের কোন কোন জেলা স্পর্শকাতর, রাজ্যের কাছে আদৌ পর্যাপ্ত বাহিনী রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। এই নির্দেশ দেওয়া হয় গত ১৩ তারিখ। কমিশনের দাবি, এই নির্দেশ মতো স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরির আগেই ১৫ তারিখ গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নতুন নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে এই তথ্য জানিয়ে কমিশনের সওয়াল, “হাই কোর্টের নির্দেশ দেখে মনে হল, রাজ্যের পুলিশ যেন যোগ্য নয়, পর্যাপ্ত নয়। আমরা তো পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ আনছি।” তাদের আরও দাবি, “কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে পারে না। আমরা রাজ্যকে বলতে পারি। রাজ্য বাহিনী চাইবে।”
[আরও পড়ুন: MBA কোর্সের খরচ জোগাতে ‘সেক্সটরশন’ চক্র? রাজস্থানের ধৃত ছাত্রকে জেরায় মিলল তথ্য]
এদিকে কমিশনের অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী চাওয়ার মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, “আপনারা তো নিজেরাই বলে দিচ্ছেন, আপনাদের বাহিনী পর্যাপ্ত নয়। অন্য় রাজ্য থেকে বাহিনী আনছেন। তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে আপত্তি কেন? হাই কোর্ট তো বলে দিয়েছে, বাহিনীর খরচ দেবে কেন্দ্র। আপনাদের অসুবিধা কোথায়?” বিচারপতিদের সংযোজন, “আপনারা তো বাইরে থেকে বাহিনী আনছেনই। তা রাজ্যের পুলিশ হোক বা কেন্দ্রীয় বাহিনী, সমস্যা কী? ২০১৩, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাস দেখেই হাই কোর্ট এই রায় দিয়েছে বলে হয় আমাদের। নির্বাচন করা মানেই হিংসা ছড়ানোর লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া নয়।”
পালটা কমিশন জানায়, “আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছিলাম। আজ আমাদের সেই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তাতে পুরনো ইতিহাস ও আইবি রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮৯টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছি। হাই কোর্ট আমাদের বলেছে, কিন্তু বিষয়টি আমাদের এক্তিয়ারে পড়ে না। আমরা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে রাজ্যকে আরজি জানাতে পারি।” কমিশনের তরফে শীতলকুচির ঘটনার উল্লেখও করা হয় শীর্ষ আদালতে। রাজ্যের যুক্তি, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে সেটা তো হবে না। তাই নির্দিষ্ট বুথে থাকুক কেন্দ্রীয় বাহিনী। কোথায় থাকবে সেটা রাজ্য ঠিক করে দেবে।”
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করেই রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন, তীব্র নিন্দা ‘জাগো বাংলা’য়]
এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী হরিশ সালভে আদালতে জানান, “একবার টাইমলাইনটা দেখুন। রাজ্য ও কমিশনের একমাত্র লক্ষ্য, বাহিনীকে আটকানো। পুলিশকে নিজের মতো ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য়। কারণ রাজ্যে আইনের শাসন চলছে না, শাসকের আইন চলছে।” তাঁর আরও যুক্তি, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন বলছে ওরা এখন পরিস্থিতি বিবেচনা করছে। তার মানে ভোট করানোর আগে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানত না ওরা। তার মানে হয় ওরা ভোট করাতে চায় না, নয়তো ভোট করানোর যোগ্য় নয় ওরা।” দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য় ও কমিশনের এসএলপি বাতিল করে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে।