ধীমান রায়, কাটোয়া: হেঁসেল আলাদা। কিন্তু তিন পরিবারের মধ্যে সদ্ভাব অটুট। গায়ে গায়ে বাড়ি। তাই প্রায় সারাদিনই তাঁরা গায়ে গায়ে লেগে থাকেন। সেই পরিবারের গৃহিণীরাই কিনা পঞ্চায়েত নির্বাচনে (Panchayat Election) একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন। কাটোয়ার (Katwa) গুসুম্বা গ্রামের দাস পরিবারের অন্দরেই এবার রাজনৈতিক উত্তাপের আঁচ লেগেছে। এক জা তৃণমূলের (TMC), আরেক জা সিপিএমের (CPM) প্রার্থী হয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের একই আসনে। আর কাকী শাশুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির (BJP) প্রার্থী। দাস পরিবারের তিন বধূর ভোটযুদ্ধ নিয়ে উৎসাহ বাড়ছে স্থানীয়দের।
কাটোয়া-১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতে ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন রয়েছে। আর এই এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির আসন রয়েছে ৩ টি৷ গুসুম্বা গ্রামের ২ নম্বর সংসদ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন গৃহবধূ স্বপ্না দাস। ওই একই আসনে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন রিনা দাস। স্বপ্নাদেবীর জা হন রিনা দেবী। আর স্বপ্নাদেবী ও রিনাদেবীর কাকী শাশুড়ি অর্চনা দাস কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২১৬ নম্বর আসনে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন।
[আরও পড়ুন: কোচবিহারে লাগাতার অশান্তি, ভোটের মুখে বাড়ল নিশীথের নিরাপত্তা]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসুম্বা গ্রামের দাসপরিবার মূলত কৃষিজীবী (Farmers)। বিজেপির প্রার্থী অর্চনাদেবীর স্বামী নিত্যগোপাল দাসরা পাঁচ ভাই। তাঁদের মধ্যে অর্চনাদেবীর এক ভাসুরের ছেলে মিঠুন দাসের স্ত্রী তৃণমূল প্রার্থী স্বপ্নাদেবী। অর্চনাদেবীর আরেক ভাসুরের ছেলে সুশান্ত দাসের স্ত্রী সিপিএমের প্রার্থী রিনা দেবী। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, একসময় পুরো পরিবারটি ছিল সিপিএমের সমর্থক। তারপর মিঠুন দাস ২০১৭ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। মিঠুনের কাকা নিত্যগোপালবাবু ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। রিনাদেবীরা অবশ্য এখনও সিপিএমেই রয়ে গিয়েছেন। আর এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাই তিন পরিবারই এবার সন্মুখ সমরে।
সিপিএম প্রার্থী রিনা দাস বলেন, “আমরা দুই জা একই আসনে দুই দলের প্রার্থী হয়েছি। কাকিমা শাশুড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সবাই নিজেদের দলের নির্দেশমতো প্রচার করছি। তবে আমাদের পরিবারের সকলের সঙ্গে সকলের সুসম্পর্ক রয়েছে।” তৃণমূল প্রার্থী স্বপ্না দাসের বক্তব্য, “বাড়ির মধ্যে আমাদের হৃদ্যতা যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরে প্রচার করছি। মানুষ বিচার করবেন কাকে জেতাবেন।” আর বিজেপির প্রার্থী অর্চনা দাসের কথায়, “মোদিজির উন্নয়নে অনুপ্রাণিত হয়েই আমার স্বামী বিজেপিতে আসেন। তারপর দল আমাকে প্রার্থী করেছে। আমি জিতলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তবে ভোটের এই লড়াই আমাদের পারিবারিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। বউমারাদের মধ্যেও যথেষ্ট সৌজন্যবোধ আছে।”
[আরও পড়ুন: জবাইয়ের হাত থেকে রক্ষা, ইদে ৩০০ ছাগলকে বাঁচাল জৈন ধর্মাবলম্বীরা]
উল্লেখ্য, একসময় গুসুম্বা গ্রামের দাস পরিবার ছিল বামেদের ভোটব্যাংক। আর এই গ্রামে দাস পরিবারের যথেষ্ট দাপটও ছিল। সেই পরিবারের ‘ভোটব্যাংক’ এখন ভেঙে তিনভাগ হতে চলেছে। রয়েছেন গ্রামের অন্যান্য ভোটাররাও। তাই শেষপর্যন্ত জনগণের রায় কোনদিকে যায়, সেই চর্চা চলছে।