অভিষেক চৌধুরী, কালনা: কথায় আছে ‘আদরের জামাই’। শ্বশুরবাড়িতে আসতেই ‘জামাই আবদার’ রাখতে তৎপরতা বাড়ে শ্বশুরের। অন্যদিকে শ্বশুরের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ববান জামাইও। ভালবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গায় শ্বশুর-জামাইয়ের মধ্যে মিলও খুব। একে অপরের প্রতি বেশ টান। কিন্তু তাতে কী? রাজনৈতিক মতাদর্শে দু’জনে দুই মেরুর বাসিন্দা। কারণ, শ্বশুর সিপিএম (CPM), জামাই তৃণমূল (TMC)। একজন পঞ্চায়েত, আর একজন জেলা পরিষদ। পৃথক দুই স্তরের দুই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা অতি ঘনিষ্ঠ শ্বশুর-জামাই। যদিও দু’জনেরই দাবি, এলাকার উন্নয়ন, সাধারণ মানুষজনের পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যেই পঞ্চায়েত ভোটে এই লড়াই।
গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি নয়। জীবনে প্রথমবার পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) লড়াইয়ে নেমে পূর্ব বর্ধমানে (East Burdwan) একেবারে জেলা পরিষদের ১৬ নং আসনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন তরুণ তুর্কি তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকার মানুষজনের বিপদে-আপদে পাশে থাকায় খুব অল্প বয়সেই সুনাম কুড়িয়েছেন শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের পানবড়েয়া গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী তন্ময়। বরাবরই ডানপন্থী পরিবারের এই যুবক কলেজের ছাত্র রাজনীতি থেকে গ্রাম ও জেলাস্তরের রাজনীতিতেও সফল হয়েছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দু’বার ব্লক সভাপতি থেকে জেলা যুব কমিটির সদস্য হয়ে বর্তমানে তিনি মন্তেশ্বর ব্লকের যুব সভাপতি পদে রয়েছেন। প্রথমবার জেলাপরিষদে দাঁড়িয়েই নিজের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত তন্ময়।
[আরও পড়ুন: রাজ্যপাল-নির্বাচন কমিশন দ্বন্দ্ব, রাজীব সিনহার পাশে দাঁড়িয়ে ‘লড়ে নেওয়া’র বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর]
অন্যদিকে, শুশুনিয়া পঞ্চায়েতের ৩ নং আসনে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন তন্ময়ের ৫৯ বছর বয়সি শ্বশুর সীতাংশুশেখর মুখোপাধ্যায়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সিপিএম দলে থাকা সীতাংশুবাবু দু’বার সিপিএমের হয়ে জয় পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হন। স্বাভাবিক কারণে দুই মেরুর দুই দলে থাকা শ্বশুর-জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এলাকার মানুষজন। নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে কীভাবে একে অপরের দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন সেই নিয়েও চর্চা এখন তুঙ্গে। যদিও একে অপরের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি কেউই।
[আরও পড়ুন: ভারী ব্যাগের চাপে বিপন্ন শৈশব, পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগের ওজন বেঁধে দিল কর্ণাটক সরকার]
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার উন্নয়নই মূল লক্ষ্য। তার সঙ্গে এলাকার মানুষজনের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা জনপ্রতিনিধিদের কাজ হওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যপূরণ করতেই ভোটে দাঁড়িয়েছি।” শ্বশুরের ভোটে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে তিনি জানান, “মাত্র ১৪ মাস হল আমার বিয়ে হয়েছে। আর জ্ঞান হয়ে থেকেই শ্বশুরমশাইকে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখেছি। তাই গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ ভোটে দাঁড়াতেই পারেন।” অন্যদিকে শ্বশুর সীতাংশুশেখর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার উন্নয়ন করতে তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে সিপিএম করছি। পঞ্চায়েতে ২ বার জয়লাভও করেছি।” তৃণমূল প্রার্থী জামাই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “রাজনৈতিক মতাদর্শে জামাই আলাদা হলেও এলাকার ও মানুষের উন্নয়নটাই মূল লক্ষ্য হওয়া দরকার।”