রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা নির্বাচন ছ’মাসও বাকি নেই। বিজেপিকে চিন্তায় ফেলে দিল উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহল। এমনকী, মতুয়াগড়ও। উত্তর থেকে সাতটি ও জঙ্গলমহল থেকে পাঁচটি, মোট ১২টি আসন গত লোকসভা ভোটে পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। একুশের বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেলেও গড় পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। কিন্তু পঞ্চায়েতের (Panchayat Election 2023) ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল ভরাডুবি দশা। যা মুহুর্তে পৌঁছে গিয়েছে দিল্লির দরবারেও। প্রমাদ গুনছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাও। সূত্রের খবর, কেন এই বিপর্যয় তা নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে দিল্লির তরফে।
উত্তরবঙ্গ বিজেপির (BJP) বড় ভরসা ছিল। সেখান থেকে একাধিক জেলাপরিষদ আসবে বলে দাবি করেছিলেন রাজ্য নেতারা। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাদের। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাথমিক ফল দেখে জেলা পরিষদ দখলের আশাও মঙ্গলবার রাতে ছেড়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। গননা চলাকালীন রাত সাড়ে ন’টার খবর, কোচবিহারে গ্রাম পঞ্চায়েতে যেখানে তৃণমূল পেয়েছে ১,৪৩৮টি আসন। সেখানে বিজেপির প্রাপ্ত আসন ৪৭২টি। আবার আলিপুরদুয়ারে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩৩টি আসন এসেছে তৃণমূলের দখলে। তখন বিজেপির দখলে ২৭৪টি আসন। জলপাইগুড়িতেও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৭৩টি আসন তৃণমূল পেয়েছে। সেখানে বিজেপির আসনসংখ্যা ২৪৮টি। অথচ উনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্র বিজেপির দখলে ছিল। এবার পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গের চা বাগান এলাকায় আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে শাসক শিবির দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই দুই এলাকায় চমকপ্রদ ফল করেছে তৃণমূল।
[আরও পড়ুন: জিটিএ-পুরসভার পর পঞ্চায়েতেও জয়জয়কার, পাহাড়ে অনীত থাপার মাথায় ত্রিমুকুট]
আবার জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসন দখলে বিজেপিকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। এই চারটি লোকসভা কেন্দ্রই যেখানে বিজেপির দখলে রয়েছে। বাঁকুড়ার সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। একই অবস্থা মতুয়া গড়েও। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নিজের বুথেই পরাজয় হয়েছে বিজেপি প্রার্থীর ৷ গাইঘাটা ব্লকে ভরাডুবি। গাইঘাটার ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টিতে তৃণমূল জিতেছে। একটি ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৷
পঞ্চায়েত ভোটে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে ফল ভাল না হওয়াটা চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির কাছে অশনি সংকেত বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, বুথস্তরে আমাদের সংগঠন যে কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলই তার প্রমাণ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘গত লোকসভা ভোটের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। গত আঠারোর পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের আসন বেশি রয়েছে। আমরা আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার—সহ কয়েকটি জেলা পরিষদ আসন পেতাম। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে গণনাকেন্দ্রে তান্ডব চালাচ্ছে তৃণমূল।’’কয়েকটি বুথে সন্ত্রাস হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য বিজেপি নেতারা। মোট ৬১ হাজার ৬৩৬টি বুথের মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছিল খুবই কম সংখ্যক বুথে। কিন্তু অধিকাংশ যেসব বুথেই ভাল ভোট হয়েছে সেখানেও ফল খারাপ হয়েছে বিজেপির। আর তা নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল দলের মধ্যেই।