সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ভিন রাজ্যে থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন। আর তা প্রত্যাহারও হয়ে গেল প্রার্থীর অজান্তেই। কেউ থাকছেন দুবাইয়ে, তার মনোনয়ন দাখিল হচ্ছে মিনাঁখায়। কেউ থাকছেন ওড়িশায়, তাঁর প্রার্থীপদ প্রত্যাহার হয়ে যাচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদে। পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election) আগে এহেন ‘ভূতুড়ে’ কাণ্ড নিয়ে জেরবার কমিশন থেকে আদালত। ওড়িশায় থেকেও নকল সই করে বিজেপি প্রার্থীর প্রার্থীপদ প্রত্যাহার নিয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে (Calcutta HC) কড়া নাড়তে চলেছেন বুদবুদের অপু লোহার। গলসি-১ ব্লকের বুদবুদ গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩৩ নম্বর সংসদে এবারেও বিজেপির প্রার্থী অপু লোহার।
গতবার এই আসনে জয়লাভ করেছিলেন অপু। এবার মনোনয়ন দাখিলের পর শাসকের লাগাতার হুমকির জন্য অপুকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওড়িশায় (Odisha)। সেখানে থাকাকালীন তিনি জানতে পারেন, তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়ে গিয়েছে। প্রার্থী উপস্থিত না থেকেও প্রত্যাহারের জন্যে তাঁর সই করল? সই করেছেন অপু লোহারের প্রস্তাবক, তাঁর স্ত্রী। বিজেপির অভিযোগ, অপুর ভাই ও স্ত্রীকে জোর করে বুদবুদে বিডিও অফিস নিয়ে যায় তৃণমূলের কর্মীরা। সেখানেই জাল সই করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানো হয়। এই ‘অন্যায়’ কাজে মদতের অভিযোগে বিডিও-র বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার ও রাজ্যপালকে অভিযোগ করেছে বিজেপি।
[আরও পড়ুন: ‘ভারতীয়রা ফর্সা নন?’, খুশি-সুহানার ‘আর্চিস’ বর্ণবিদ্বেষের শিকার হতেই কষিয়ে জবাব জোয়ার]
এই ঘটনায় উলুবেড়িয়ার পর আরেকজন বিডিওর (BDO) নাম জড়াল পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনৈতিক কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগে। ইতিমধ্যে উলুবেড়িয়ার বিডিওর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এবার গলসি ১ নম্বর বিডিওর বিরুদ্ধেও আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি (BJP)। প্রার্থী অপু ফিরতে তাঁর আসল সইয়ের জন্যে তাঁর পিছু নিয়েছে তৃণমূল ও বিডিও অফিসের কর্মীরা বলে অভিযোগ অপুর। আতঙ্কে পূর্ব বর্ধমানের এক জায়গায় আত্মগোপন করে আছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: কুন্তলের চিঠি মামলা: ‘প্রেসিডেন্সি জেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের কাজ শেষ’, হাই কোর্টে জানাল CBI]
অপু লোহার ফোনে জানান, “আমি ওড়িশা থেকে ফিরে এসে শুনলাম, আমার নাম প্রত্যাহার হয়ে গিয়েছে। বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম। ওড়িশা থেকে আমার সই কী করে হলো জানতে। তাঁরা দেখাতে চাইলো না। আসল সইয়ের জন্যে এখন আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমি এর বিচার চাইতে আদালতে যাব।” বিজেপির ব্লক সভাপতি রতন প্রসাদ সাউ জানান, “প্রত্যাহারের তারিখের আগেই ওকে ওড়িশায় পাঠিয়ে দিই। হঠাৎ দেখি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ওর নাম নেই। ওর স্ত্রীকে তৃণমূল জোর করে নিয়ে গিয়ে সই জাল করে প্রত্যাহার করিয়েছে। আমরা বিডিও অফিসে গেলে তিনি জানান, প্রস্তাবক প্রত্যাহার করতেই পারে। বিডিও ও তৃণমূল এই কাণ্ডে যুক্ত। আমরা হাই কোর্টে যাব।” অন্যদিকে, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ বলে এড়িয়ে যান। গলসি-১ নম্বর ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস জানান, “প্রস্তাবক স্ত্রী। প্রত্যাহারের ফর্মে প্রার্থীর সই ছিল। প্রার্থীর সই করা অথোরাইজেশন লেটারও ছিল। সমস্ত ভিডিও করা আছে। কমিশনের গাইডলাইন মেনেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।”