সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোট কবে? “নাই জানি।” একেবারে স্পষ্ট উত্তর সোমবারি হাঁসদার।
ভোট নিয়ে দেওয়াল লিখন নেই কেন ? অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন টুকলু হাঁসদা। তা ভোট কবে? “বলতে নাই পারব।”
ভোট কবে?” না উটা বলে নাই। তবে উয়ারা আসেছিল?” কারা? “আসেছিলো…।” আর কোন রা নেই হাবু হাঁসদার।
পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের (Panchayat Election) দলমা পাহাড় রেঞ্জ ছুঁয়ে থাকা আঁধারঝোর, আসনপানি ঠরকাদহে ভোট নিয়ে কোন তাপ-উত্তাপ নেই। গ্রাম বাংলার ভোটে জঙ্গলমহলের এই গ্রামীণ জনপদগুলিতেও একেবারে উলটো ছবি।
কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের কিছু উত্তর মেলে। কিছু-র কোনও জবাব মেলে না। বনমহলের এই বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ির সীমানা পার হলেই ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ধারবুরু পাহাড়ের জঙ্গল। একসময় এই এলাকা ছিল মাও মুক্তাঞ্চল। কিন্তু এখন সেসব অতীত। গ্রামের ঢালাই রাস্তা দিয়ে সবুজ সাথীর সাইকেলে চড়ে যায় বাংলার এই শেষ গাঁয়ের কন্যাশ্রীরাও। ঘরের দুয়ারেই মেলে রেশনের চাল। কিন্তু তবুও এই তল্লাট কেমন যেন থমথমে। একেবারে চুপচাপ। অতীতের ছায়া যেন রয়েই গিয়েছে। তাই এই ভোট উৎসবেও বান্দোয়ানের এই গ্রাম গুলির দেওয়ালে নেই ভোটের কোন দেওয়াল লিখন। নেই কোন রাজনৈতিক দলের পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার, হোর্ডিং, কার্ট আউট। নেই প্রার্থীদের ভোট প্রচারও।
[আরও পড়ুন: গালওয়ান সংঘাত থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ, SCO সামিটে মুখোমুখি মোদি-শি-পুতিন]
এই এলাকায় প্রায় ১৩৫টি পরিবার রয়েছে। সামান্য চাষাবাদ, দিনমজুরি আর জঙ্গলের বনজ সম্পদ বিক্রি করে দিন গুজরান হয় তাদের। ১০০ দিনের কাজ না হওয়ায় একের পর এক গ্রামের পুরুষরা বাইরে যান কাজ করতে। আসনপানি গ্রামের সুমিতা হাঁসদা বলছিলেন, “ভোট কবে জানি না। স্লিপ দিলে জানতে পারব। ভোটটা হয়তো দেব। কিন্তু এই ভোট দিয়ে কী আমাদের কোন দিনবদল হবে? পরিবারের পুরুষদের তো সেই বাইরেই যেতে হবে।” তাই ভোট নিয়ে কোন উৎসাহ নেই বান্দোয়ানের এই জনপদগুলিতে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য রথু সিং বলেন, “ওই গ্রামের মানুষজন দেওয়াল লিখতে দেন না। তবে বাড়ি-বাড়ি প্রচার হয়।”
[আরও পড়ুন: ‘মুসলিমবিদ্বেষী আচরণ মেনে নেওয়া হবে না’, কোরান পোড়ানোর তীব্র নিন্দা সুইডেনের]
কিন্তু তার যে কোন ছাপই নেই গ্রামে! অথচ আগের মত নেই কোনও হুমকি। ভোট বয়কটের ডাক। তবুও বাংলার এই শেষপ্রান্তে পা রাখলেই যেন গা ছমছম করে। কিন্তু অভয়দানে এই এলাকায় এখনও এরিয়া ডমিনেশন করেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথমুখী করতে কমিশনেরও প্রচার নেই। তাই গ্রামীণ ভোটেও এই গাঁ-গঞ্জ গুলিতে যেন ‘অন্য গ্রাম’ হয়ে রয়েছে। এই ভোট পরবেও!