বিক্রম রায়, কোচবিহার: তিন-চারটি স্থানে জমির মালিকানা দুরস্ত, রয়েছে মাটির দাওয়ার উপর দোচালা একটি ঘর। সেই ঘরের উঠানে বসেই রবিবার সকালে সবজি কাটছিলেন ঘোকসাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি বর্মন। টিনের সেই দোচালা ঘরটি দেখিয়ে দাবি করেন, এটাই তাঁর ঘর। নেই কোনও গাড়ি। নেই সরকারি চাকরি। স্বামী কেরলে দিনমজুরের কাজ করতেন। এখন স্থানীয় কয়েকজনের গাড়ি চালিয়ে তাঁর সংসার চলে। শনিবার মাথাভাঙার কলেজ মাঠ থেকে তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে এই ভাবেই সাফাই দিলেন কোচবিহারে (Cooch Behar) বিজেপির ঘোকসাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান।
তবে আবাস প্লাস যোজনায় (PM Awas Yojona) স্বামী, শ্বশুর এবং কাকাশ্বশুরের নামে ঘর বরাদ্দ হওয়ার কথা স্বীকার করে নেন তিনি। দাবি করেন, স্বামীর নামে ঘরটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্বামীর নামে জব কার্ড তৈরি করার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল সেটাও স্বীকার করে নেন প্রধান দীপ্তি বর্মন। কাঁচা বাড়ি থাকলেও প্রধানের পরিবারের নামে একসঙ্গে তিনটি ঘর বরাদ্দ নিজের প্রভাব খাটিয়ে প্রধান করেছেন বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। স্বাভাবিকভাবে এই ঘটনায় চাপের মুখে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: পরকীয়ায় মেতে মা! বেনজিরভাবে বাবাকে শিশুকন্যার দায়িত্ব দিল কর্ণাটক হাই কোর্ট]
এ বিষয়ে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, ”প্রধানের পরিবারে তিনজন ঘর পাচ্ছে। এটা স্বজনপোষণ ছাড়া আর কিছু নয়। তৃণমূল দায়িত্ব নিয়ে দলের পঞ্চায়েত প্রধান এবং সদস্যদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। অথচ বিজেপি একটি মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে, সেখানে দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করছে। এবার চাপের মুখে ঘর ছাড়ার কথা তাঁরা বলছে। অথচ এখনও তাঁদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় জ্বলজ্বল করছে!” শুধু নিজের ঘর নয়, প্রধানকে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের ঘর ছাড়তে হবে বলে তিনি দাবি করেছেন।
[আরও পড়ুন: ব্রাজিলের বিখ্যাত ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’ মূর্তিতে বজ্রপাত! কতটা ক্ষতি, চিন্তিত আমজনতা]
ঘোকসাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপির দীপ্তি বর্মনের দাবি, তিনি আগেই ঘর ছাড়তে চেয়েছিলেন তবে প্রশাসনিক আধিকারিকরা তাঁর ঘর পরিদর্শনের পর বলেন, আবাস প্লাসে ঘর পাওয়ার যোগ্য তাঁরা, তাই এখনই ঘর ছাড়তে হবে না। তা সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন, তাঁর ঘর যাতে প্রথম তালিকায় না থাকে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম তালিকায় তাঁর স্বামীর নাম নেই। পরের তালিকাতেও যাতে তাঁর নাম না থাকে তার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাবেন।
তবে দীপ্তি বর্মনের দাবি, কোনও দুর্নীতি তিনি করেননি। চার বছর ধরে পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছেন অথচ স্বামীর একটি বাইক পর্যন্ত নেই বলে আক্ষেপ তাঁর। নিজের ভাইয়ের বাইক নিয়ে তিনি ঘোরাঘুরি করেন। অন্যের গাড়ি চালিয়ে এবং কৃষিকাজ করে স্বামী সংসার চালান। এই ধরনের নজির কোচবিহার জেলায় তৃণমূলের আর কোনও পঞ্চায়েত প্রধানের রয়েছে কিনা, সেটাও তৃণমূলের খুঁজে দেখা উচিত বলে মনে করেন দীপ্তি। তাঁর বা তার স্বামীর নামে কোথাও কোন জমি কেনা হয়েছে কিনা সেটা এখন অনলাইনের মাধ্যমে সদিচ্ছা থাকলে দেখা যায়। সেখানে দেখলে জানা যাবে এই ঘরটি ছাড়া তাদের আর জমি নেই। স্বামীর নামে জব কার্ড (Job Card) তৈরি হলেও সেখানে একটিও কাজ করা হয়নি বলেই বিজেপির সেই প্রধান দাবি করেছেন।