সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পের খাবারের বিল নিয়ে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলেছেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান। খাবার সরবরাহকারী সংস্থাকে বেশি টাকা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আটকাতে গেলে কুকথা শুনিয়েছে ‘সহকর্মীরা’। প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন বর্ধমান-২ ব্লকের কুড়মুন-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তারা মালিক। মূলত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাসুদেব দে’র মদতে এই অনিয়ম হচ্ছিল বলেও অভিযোগ প্রধানের।
পঞ্চায়েত এলাকায় ষষ্ঠ দফার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে বিভিন্ন কাজে অংশ নেওয়া কর্মীদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছিল পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুশোজনকে দুপুরে ডিম-ভাত খাওয়ানো হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে খাবার সরবরাহকারী সংস্থা মোট আড়াইশো জনের বিল জমা দেয়। এমনকী ডিম-ভাতের জন্য ৬৫ টাকা করে বিল করে ওই সংস্থা। প্রধান তাতে আপত্তি জানান। বিলে সই করতে অস্বীকার করেন প্রধান। এই নিয়ে উপপ্রধানের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়। উপপ্রধানের অনুগামীরা প্রধানকে নানাভাবে হেনস্তা ও গালিগালাজ করে বলেও অভিযোগ। অপমানিত হয়ে প্রধান শুক্রবার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বিডিওর কাছে।
[আরও পড়ুন: প্রাথমিকের ২টি মামলা থেকে সরলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, ‘সুপ্রিম’ নির্দেশ হাতে পেয়ে কাটল সংশয়]
প্রধান তারা মালিক এদিন ফোনে বলেন, “আমাকে দিয়ে জোর করে অনিয়ম করাতে চাইছিল। বেশি সংখ্যক মিল ও বেশি দামের বিলে সই করাতে চাইছিল। সই না করায় অপমানিত হতে হয়েছে। এর আগেও এই ধরনের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় হেনস্তা হতে হয়েছিল। বারবার অপমানিত হয়ে থাকতে চাই না বলে পদত্যাগ করেছি।” দুপুরের খাবারের ডিম-ভাতের দাম ৬৫ টাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বর্ধমান শহরের বড় হোটেলেও ডিম-ভাত পাওয়া যায় ৪০ টাকায়। গ্রামের তুলনায় কিছুটা কম দাম থাকে। সেখানে ডিম-ভাতের দাম ৬৫ টাকা খুব বেশি বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পঞ্চায়েত সদস্যও। এর আগেও একইভাবে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল এই পঞ্চায়েতে।
তৃতীয় দফার ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের সময়ও খাবারের বিল নিয়ে উপপ্রধানের মদতে অনিয়ম করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। সেই সময়ও বিলে সই করতে চাননি প্রধান। তাঁকে নানাভাবে চাপ দেওয়ায় সেই সময় বেশ কিছুদিন পঞ্চায়েতে আসাও বন্ধ করেছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। সেই সময় বিডিও, বিধায়ক-সহ পদস্থ কর্তারা সকলকে নিয়ে বসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। এবার ফের একইরকম অভিযোগ উঠেছে। নিশানায় সেই উপপ্রধান।
যদিও উপপ্রধান বাসুদেব দে এদিন ফোনে বলেন, “যা করা হয়েছে সবটাই পঞ্চায়েতে রেজুলেশন করেই করা হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আর প্রধান পদত্যাগ করেছেন কি না তা বলতে পারব না।” তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দল দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে না। খোঁজ নিচ্ছি। যদি কোনও অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে দলগত ভাবেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিডিও সুবর্ণা মজুমদার জানিয়েছেন, প্রধান খাবারের বিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।