কালীপুজোর সময় মুক্তি পাবে তাঁর ওয়েব সিরিজ ‘নিকষ ছায়া’। এরপর ফের বাংলায় ভূতের গল্প নিয়ে নতুন সিরিজ করার কথা ভাবছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee)। লিখছেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘পর্ণশবরীর শাপ’-এর সাফল্যের কারণেই কি আরেকটা সিজনে হাত দেওয়া, না কি আগে থেকেই ঠিক ছিল? ‘ভাদুড়ী মশাই’-কে নিয়ে আরও সিরিজ আসবে?
- প্রথম সিজন মুক্তি পাওয়ার পর সাকসেস পার্টিতেই দ্বিতীয় সিজনের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। লেখক সৌভিক চক্রবর্তী রচিত এই সিরিজে কিছু গল্প প্রকাশিত। এবং আমাদের আরও গল্প নিয়ে এগনোর প্ল্যান আছে।
মূল গল্প থেকে কতটা আলাদা?
- খুব একটা পরিবর্তন করিনি। তবে এই সিরিজের প্রথম গল্প ‘নিকষ ছায়া’ কিন্তু যেহেতু আমরা ‘পর্ণশবরীর শাপ’-এ অন্যান্য চরিত্রদের ইনট্রোডিউস করেছি, তাই এই গল্পটাকে সেকেন্ড সিজনে আনতে যেটুকু রদবদল করতে হয় সেটা করেছি।
চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী অভিনীত ‘নীরেন ভাদুড়ী’ একজন ডেমোনোলজিস্ট বা প্যারাসাইকোলজিস্ট। আমাদের এখানে তন্ত্রসাধকদের পাই। বাঙালি দর্শকের এই বিষয়ে কতটা টান আছে বা আপনার নিজের কতটা আগ্রহ আছে?
- তন্ত্রসাধনার ইতিহাস নিয়ে আমার প্রচণ্ড আগ্রহ। সাধারণভাবে দেখতে গেলে অনেকেই ভুল করে এটার সরলীকরণ করে। কাগজের বিজ্ঞাপনে ‘জ্যোতিষ’, ‘তন্ত্রসাধক’, ‘বশীকরণ’– এই সব কিছুতে গিয়ে ঠেকেছে বিষয়টা। আসলে তো তা নয়। এর একটা সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে। তন্ত্রের যে বৃহৎ সংজ্ঞা সেটার প্রতি আমার কৌতূহল আছে।
বাংলা সাহিত্যে যে ভালো, পরোপকারী ভূতের কথা রয়েছে, যেমন লীলা মজুমদারের গল্পে পাই- আজকাল দর্শক বা পাঠক কি তেমন গল্প দেখতে বা পড়তে চান না? একটা ভয়ংকর কিছু না হলে ভিস্যুয়াল মিডিয়ামের জন্য উপযোগী হয় না?
- দুটো উপায় আছে। লীলা মজুমদার বা অন্যদের গল্পের মধ্যে আমরা ওই মজার, পরোপকারী ভূতেদের দেখতে পাই। আমি গল্প বলার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ভয়ের, অনিষ্টকারী শক্তির সঙ্গে ভাদুড়ী মশাইয়ের লড়াইয়ের গল্পটা বেছেনিয়েছি। এখানে ভালো ভূতের উপস্থিতি নেই।
হ্যাঁ, মানে সেটাই বলছি পপুলার কালচারে, বা ভূতের গল্প নিয়ে যদি ছবি বা সিরিজ হয়, তখন এই জনারটাই ডমিনেট করে যেটা এক্সট্রিম নেগেটিভিটি নিয়ে আসে। এটাই কি ট্রেন্ড?
- হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। এটা ঠিকই সমাজ এখন ভীষণভাবে পোলারাইজড। এবং কী বলব ওই ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘disruption’ (অস্থিরতা), তো সারাক্ষণ সেই ‘ডিজরাপশন’ খুঁজে চলেছে সমাজ। সেই জায়গা থেকে দেখতে গেলে খুব সূক্ষ্ম কিছু, খুব নরম কিছু থেকে আমরা ক্রমশ আরও পয়েন্টেড, ধারালো জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। এটা ভালো না খারাপ সেটা তো অন্য বিষয়।
আপনার সাধারণত কেমন ভূতের গল্প পছন্দ?
- আমি দেশ-বিদেশের, নিজের ভাষার অন্য ভাষার ভৌতিক গল্প পড়ে এবং সিনেমা দেখে বড় হয়েছি। আই অ্যাম এ হরর বাফ বলতে পারো। আমার সেই ধরনের ভৌতিক গল্প ভালো লাগে যেখানে অতিপ্রাকৃতের সঙ্গে মানুষের জীবনচর্যা জড়িয়ে থাকে। যেমন ‘হন্টিং অফ দ্য হিল হাউজ’। এই সিরিজ প্রচণ্ড ভয়ের, কিন্তু যতটা না ভয়ের তার চেয়েও বেশি এটা আমাদের শৈশব নিয়ে। এই ইন্টার টেক্সটচুয়ালিটি ব্যাপারটা ভালো লাগে।
ভূত মানে তো অতীত। অনেক সময় আমরা বলি ভূতের তাড়া! আপনার অতীতের কোনও ঘটনা যেটা এখনও তাড়া করে?
- অজস্র আছে, এটার কোনও শেষ নেই। আমি কুড়ি বছর বয়সে আমার বাবাকে মারা যেতে দেখেছি। আমাদের অতীতগুলোই তো আমাদের তাড়া করে, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করে। এবার অতীতের সেই অভিজ্ঞতাগুলো কি আমাদের গ্রাস করে নেবে, না কি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেটার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে পারব! এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই অধিকাংশ মানুষের জীবন। এমন অনেক ঘটনাই আছে কিন্তু সেগুলো এত ব্যক্তিগত যে এখানে বলা উচিত হবে না। জামশেদপুরে একবার আমি আর মা হোটেলে ছিলাম। রাতে ঘুমাতে না পেরে মায়ের ঘরে গিয়ে দেখি মা জেগে। আমাকে দেখে বলল, ঘুমোতে পারিসনি তো! তারপর বলে, আমি সন্ধেবেলায় ঘরটায় ছিলাম, আমার অসুবিধে লেগেছে।
'ঘোস্ট ইজ অলসো অ্যান আনফুলফিলড উইশ'- অতৃপ্ত ইচ্ছে থেকেই বোধ হয় অতৃপ্ত আত্মা শব্দটা এসেছে। তেমন কোনও অপূর্ণ ইচ্ছে আছে?
- হ্যাঁ, আমাদের প্রত্যেকের জীবনে অনেক পাওয়া- না পাওয়া, চাওয়া-না চাওয়া থাকে। যেগুলাকে সহজ করে ইংরেজিতে আমরা রিগ্রেট বলি। আর এই চাওয়াগুলো আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। সব সময় সেটা কিন্তু খারাপ না। এই না পাওয়া থেকেই তো কিছু করার একটা ড্রাইভ, বা একটা তাগিদ তৈরি হয়। যতক্ষণ এই তাগিদ সুস্থ মাত্রার মধ্যে থাকছে সেটা ভালো, কিন্তু যেই সেটা অবসেশনে পরিণত হচ্ছে তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে।
অভয়ার হত্যা, সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতির অভিযোগ, ডাক্তারদের আন্দোলন, সাধারণ মানুষের সমর্থন, ডাক্তারদের অনশন প্রত্যাহার- প্রায় তিনমাস হয়ে গেল। কী মনে হয় এই প্রতিবাদ কি গেম চেঞ্জার হবে? এর পর কী?
- দেখো, আমার মনে হয় এই গোটা ঘটনা থেকে আশা করি মানুষ এই সাহসটা পেয়েছেন যে গাফিলতির জন্য প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি চাওয়া যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাক্তাররা দুর্নীতি-সহ আরও যা কিছু- অ্যাড্রেস করতে চেয়ে যা দাবি করেছেন তার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত আগেই বলেছি। এবার আন্দোলনের যা গতিপ্রকৃতি বা যে খাতে বয়েছে, সেটার সিদ্ধান্ত ডাক্তাররা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করেছে। তার সঙ্গে আমি বেশিরভাগ সময়েই একমত, কখনও বা কিছু পদক্ষেপ সময়োপযোগী মনে হয়নি, কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা, আন্দোলনের মধ্য থেকে মানুষ প্রশাসনকে প্রশ্ন করার সাহস পেয়েছে। আবার এটাও ঠিক সাধারণ মানুষ তাদের জীবনের ছন্দে ফিরতে চান। যাঁরা সেটাতে ফিরছেন বা ফিরতে চাইছেন তখন আবার সমাজ মাধ্যমে তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এটার আমি বিরোধী।
‘এই রাত তোমার আমার’ কবে মুক্তি পাবে?
- নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে শীতকালে হওয়ার কথা। ইনফ্যাক্ট অনেকগুলো কাজ জমে গিয়েছে।
কী কী?
- আমার পরিচালনায় তিনটি ছবি মুক্তি বাকি– ‘এই রাত...’, ‘আবার হাওয়া বদল’, ‘এখানে অন্ধকার’। আমার অভিনীত ছবিও রয়েছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অসুখ বিসুখ’, ‘সোনার কেল্লায় যখের ধন’।
‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ (২৩ জানুয়ারি) আর পথিকৃতের ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ জাস্ট শেষ করলাম।
এখন তো রাজ চক্রবর্তীর হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘পরিণীতা’-র শুটিং করছেন।
- হ্যাঁ, এটা করছি। দারুণ সফল ছবি। এত ভালো একটা গল্প। হিন্দি বলে সামান্য বদল হয়েছে। ঋত্বিককে দারুণ লেগেছিল। আর রাজের প্রথম হিন্দি সিরিজ, সেটা একটা ভালো লাগার জায়গা।
হিন্দিতে ছবি বা ওয়েব সিরিজ করার প্ল্যান আছে?
- হিন্দিতে পরিচালনা করছি। কথা চলছে, পরের বছর বা ২০২৬-এ হতে পারে।
নেক্সট কী কাজ শুরু করছেন?
- আরও একটা ভূতের গল্প নিয়ে বাংলা সিরিজ শুরু করব, জনপ্রিয় ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। অভীক সরকারের লেখা 'ভোগ' গল্পটা আমার খুব প্রিয়। সেটা নিয়েই এই ওয়েব সিরিজ।