চারুবাক: পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় সেই ‘শুঁয়োপোকা’ থেকে ‘ভটভটি’ হয়ে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘পারিয়া’ পর্যন্ত অধিকাংশ ছবিই সামাজিক বার্তা দিতে তৈরি করেছেন। এই প্রথম বাংলা সিনেমায় রাস্তায় ঘুরে-বেরানো বেওয়ারিশ কুকুরদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে একটি কাজের কাজ করতে চাইলেন কোনও পরিচালক। তিনি তথাগত মুখোপাধ্যায়। সেই বেওয়ারিশ কুকুরদের নিয়ে যে পাশবিক অসামাজিক ব্যবসা চলে সেই কুচক্রীদের দিকেও আঙ্গুল তুললেন তিনি। খুব ভালো বিষয় ও বক্তব্য।
তবে সিনেমায় লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত পাওয়াটাও একটা বড় উদ্দেশ্য তো বটেই! কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই তিনি যে সামাজিক উদ্দেশে ছবির চিত্রনাট্য সাজান, সেখানে অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই হয়তো এমন কিছু এলিমেন্ট রাখেন, যার ফলে দুটি উদ্দেশের কোনোটিই ঠিকভাবে দর্শকের কাছে স্পষ্ট হয় না। নিটফল- ছবি দর্শকের আনুকূল্য পায় না। তাঁর এই নতুন ছবি ‘পারিয়া’র ক্ষেত্রে তেমন কিছু না ঘটলেই খুশি হব।
অসামাজিক ব্যবসার বিবরণ দিতে গিয়ে যে ধরনের হিংস্রতা দেখালেন সেটা দর্শক কতটা সহ্য করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়!
অবশ্য, এই পথসারমেয়দের ধরার আড়ালে যে মাংসের ব্যবসা চলে তার মুখোশ খোলার জন্য সুঠাম চেহারার নায়ক বিক্রমকে যেভাবে শত্রুদের সঙ্গে লড়তে দেখলাম সেটা অনেকটাই বাড়াবাড়ি মনে হল।
এই ছবিতে চমকপ্রদ চরিত্রে রয়েছেন শ্রীলেখা মিত্র এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্যরা। তাঁদের চরিত্রের মধ্য দিয়েই সাধারন মানুষের অজানা দিকটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পরিচালক তথাগত। এটা ছবির অনন্য একটি দিক।
তথাগত দেখিয়েছেন একা বিক্রম নন, তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রাস্তার ধারে বয়স্কা হোটেলওয়ালিও (তপতী মুন্সী)। অভুক্ত পথসারমেয়দের প্রতি তার ভালোবাসা। তার প্রিয় কুকুরটি হঠাৎ উধাও হওয়ায় বিক্রম বিপুল বিক্রমে নেমে পড়ে ‘কুকুর বাঁচাও সমিতি’র একজন স্বঘোষিত উদ্ধারকারী হয়ে। হিন্দি সিনেমার মতো সিক্স প্যাক বাগিয়ে বিক্রম একা নিজের হাতে নিকেশ করে সব্বাইকে। অ্যাকশন দৃশ্যেও রীতিমতো তুখড় বিক্রম। বাকি গল্পটা না ভাঙাই শ্রেয় এই পরিসরে।
সৎ উদ্দেশ্য থাকলেও কিঞ্চিৎ পরিমিতিবোধ না থাকায় উদ্দেশ্য সাধন অসম্ভব! অবশ্যই ক্যামেরার কাজ, অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর কোরিওগ্রাফি কারিগরি দিক থেকে ‘পারিয়া’ দর্শনীয়। কিন্তু দেখার আফটার এফেক্ট! এই ছবিতে একমাত্র নজর থাকবে বিক্রমের ওপর। ছোটপর্দায় দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বড়পর্দায় পরীক্ষাতেও চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। ‘শেষ পাতা’ এবং ‘অর্ধাঙ্গিনী’তে দুর্দান্ত কাজ করার পর এক নতুন ইমেজে ধরা দিলেন বিক্রম। শরীরী ভাষাটাই বদলে ফেলেছে। সত্যিই অসহায়দের ‘সহায়’ হয়ে উঠতে ত্রুটি রাখেননি তিনি। শ্রীলেখা মিত্র, লোকনাথ দে বেশ ভালো। আর অম্বরীশ ভট্টাচার্য মুখোশধারীর চেহারাটি সুন্দর পরিবেশন করেছেন। এই ছবির পাওনা তাই বিক্রম আর অম্বরীশ।
চিত্রনাট্য- ২.৫
পরিচালনা- ২
অভিনয়- ২.৫
সবমিলিয়ে- ২.৫