বোরিয়া মজুমদার, প্যারিস: নিখাত জারিনের দিকে স্রেফ তাকানো যাচ্ছিল না। কাঁদছিলেন তিনি। কখনও অঝোরে। কখনও ফুঁপিয়ে। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায়। এত মাসের পরিশ্রম, এক লহমায় সব শেষ। উ ইউয়ের কাছে যে হেরে গিয়েছেন নিখাত।
‘‘জানেন, গত দু’দিনে আমি কিছু খাইনি। জল পর্যন্ত না। ঘুমোতেও পারিনি। পেটে খিদে নিয়ে কী আর ঘুম আসে? জিতলে সবাই ইতিবাচক ভাবে এ সমস্তকে দেখত। এখন বলবে, অজুহাত দিচ্ছে। তাই বেশি কিছু আমি আর বলতে চাই না,’’ হাহাকার করে চলেন নিখাত। আর বলতে বলতে কখন যে দু’চোখ ছাপিয়ে জল নামে, খেয়ালও থাকে না।
‘‘জানেন, সর্বস্ব দিয়েছিলাম আমি। তবু হল না। এখন আমি বিশ্রামে যাব। একটা ব্রেক দরকার আমার। আমি পুরুষদের সঙ্গে লড়েছি। কঠিনতম ট্রেনিং করেছি। কিন্তু আজ দিনটা আমার ছিল না। আমি শিখলাম অনেক কিছু। এটুকু বলতে পারি, লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসব না আমি। লড়ে যাব। সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব। নিখাত জারিন এক যোদ্ধার নাম। যে যোদ্ধা লড়াই থেকে কখনও সরে আসবে না। আর সেটাই তো আমার একমাত্র হাতে আছে,’’ সঙ্গে যোগ করেন নিখাত (Nikhat Zareen)।
ততক্ষণে ভারতীয় মিডিয়ার সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের পর্ব শেষ। ক্লান্তিতে ঢকঢক করে জল খেলেন অনেকটা। তার পর হঠাৎ এই প্রতিবেদকের দিকে ঘুরে বললেন, ‘‘আশা করি, এর পরেও আপনি আমাকে আইসক্রিম খাওয়াবেন। সঙ্গে চকোলেট। আর শেষে একটা কোল্ড ড্রিঙ্ক?’’ বলে জড়িয়ে ধরে ঝরঝরিয়ে কাঁদতে থাকেন নিখাত। কী করব আমি, বুঝতে পারছিলাম না। কোন ভাষায় সান্ত্বনা দেব, মাথায় আসছিল না। মনে হচ্ছিল, সময় সময় খেলা কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে! সেই সময় নিখাত জারিন কোনও অ্যাথলিট ছিলেন না। আমি সাংবাদিক ছিলাম না। আমরা ছিলাম দুই ভারতীয়, স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় যারা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘এবার রনজি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে বাংলা’, লক্ষ্মী স্যরের ড্রেসিংরুমে গিয়ে পেপটক শামির]
এবং কাঁদতে কাঁদতেই নিখাত বোঝালেন, কেন তিনি নিখাত। ভারতীয় বক্সার বলছিলেন, ‘‘জানেন, আমার কোচ আমাকে টাইগার বলে। বাঘ।’’ শুনে পাশ থেকে ভারতীয় মিডিয়ার একজন বলে উঠলেন, ‘‘টাইগার আভি জিন্দা হ্যায় (বাঘ এখনও জীবিত)!’’ শুনে সর্বপ্রথম হাসি দেখা যায় নিখাতের মুখে। দিনের প্রথম ও শেষ। যে হাসি আনন্দের নয়। যন্ত্রণার হাসি।
এটা ঘটনা যে, প্যারিস অলিম্পিক (Paris Olympics 2024) শেষ নিখাত জারিনের জন্য। কিন্তু নিখাত জারিন শেষ নন। জানা নেই, ২০২৮ সালে বক্সিং লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকের অংশ হবে কি না? কিন্তু আমরা এটুকু জানি যে, নিখাত লড়ে যাবেন। আর আমরা তাঁকে সবাই উৎসাহ দিয়ে যাব। দর্শক-সাংবাদিক নির্বিশেষে। নিখাতের সঙ্গে যে সম্পর্ক আমাদের দেশজ বন্ধন।
ভারতবর্ষের বন্ধন!