তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: অসংরক্ষিত কামরায় শোওয়ার জায়গা দখল করা নিয়ে সহযাত্রীদের সঙ্গে গন্ডগোলের জেরেই নিজের পিস্তলের গুলিতে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছিল কামাখ্যা-আনন্দবিহার এক্সপ্রেসের যাত্রীর। সোমবার রাতে ওই অসংরক্ষিত কামরায় থাকা অন্য প্রত্যক্ষদর্শী সহযাত্রীদের বয়ান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখে এমনটাই অনুমান করছেন রেল পুলিশের তদন্তকারীরা।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে মৃত যাত্রীর নাম সঞ্জয় সিং পারমার(৪২)। তাঁর বাড়ি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র এলাকায়। সেনাবাহিনীর প্রাক্তন নায়েক সঞ্জয়বাবু গোয়াহাটিতে এক ঠিকাদারের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার গোয়াহাটি থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তাঁর কাছে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল ছিল। যার লাইসেন্স সঞ্জয়বাবুর নামেই ছিল। অসংরক্ষিত কামরায় শোওয়ার জায়গার একাই দখল নিয়েছিলেন তিনি। সহযাত্রীদের কেউ কেউ এই ঘটনার প্রতিবাদ করতেই ব্যাগ থেকে পিস্তল বার করে অন্য যাত্রীদের ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন সঞ্জয়বাবু। সহযাত্রীদের দাবি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন তিনি। তাঁরা আরও জানিয়েছেন এরপরেই অসতর্কতা বশেই পিস্তল থেকে গুলি ছিটকে তাঁর নিজেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। যদিও তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, পিস্তল তাক করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্য কারও সঙ্গে হাতাহাতির সময়েও গুলি লেগে যেতে পারে তাঁর। সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যেই একটি খুনের মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ(জিআরপি)।
[আরও পড়ুন: অন্যের বউকে লুকিয়ে বিয়ে করে বিপাকে যুবক, ভালবাসা ফিরে পেতে দ্বারস্থ দিদির দূতের!]
রেল পুলিশ (জিআরপি) সুপার সেলভা মুরুগন বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ওই ব্যক্তি একজন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান ছিলেন। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অন্যদিকে, রেল পুলিশের (জিআরপি) তরফে সোমবার রাতেই মধ্যপ্রদেশে সঞ্জয়বাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সঞ্জয়বাবুর ভাই রাজেশ সিং পারমার এসে ময়নাতদন্তের পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যদিও অন্য রাজ্যে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছেন রাজেশবাবু।
তিনি বলেন, “অন্য এক রাজ্যে আমার ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা আমাদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।”
রেল পুলিশের তদন্তকারীদের একাংশের অবশ্য দাবি, ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময়ে এই ঘটনা ঘটায় অনেকেই ঘটনার সময়ে অসতর্ক ছিলেন। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য তাঁকে খুন করেছে কি না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মূলত একজন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মী অনেকসময় গোপনে সরকারি বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। কাজেই সেই শত্রুতার জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছহে। এর পাশাপাশি বর্তমানে যে ঠিকাদারের দেহরক্ষী হিসেবে সঞ্জয়বাবু কাজ করতেন তাঁর কোনও শত্রু কোনও পুরনো রাগের কারণে যাত্রী সেজে ঘটনা ঘটিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছিল কিনা তাও দেখা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে মোট তিন রাউন্ড গুলি চলেছিল। ট্রেনের ভিতরেও গুলি চলেছিল। এছাড়াও সঞ্জয়বাবুর ব্যাগে আরও পাঁচটি তাজা কার্তুজ ছিল। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে দেহে একটি বুলেট মিলেছে। সেই গুলি সবকটি সঞ্জয়বাবুর নিজের পিস্তলের থেকেই চলেছিল কি না, তা জানতে ব্যালেস্টিক দলকে তদন্তের জন্য ডাকছে রেল পুলিশ(জিআরপি)। ট্রেনের কেটে রাখা কামরাটিকেও সিল করে দেওয়া হয়েছে।