অভিরূপ দাস: এসেছিলেন রোগী হয়ে ডাক্তার দেখাতে। ভাগ্যচক্রে হয়ে গেলেন সন্দেহভাজন চোর। পরতে হল খানাতল্লাশির মুখেও। খোদ হাসপাতালের কর্মচারীরাই ঘেঁটে দেখলেন ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে হাতের ঝোলা। যদিও শেষ পর্যন্ত কিছুই মেলেনি। বুধবার এমনই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্যের অন্যতম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম (SSKM)।
এসএসকেএম-এর নতুন ওপিডি বিল্ডিংয়ে একাধিক বিভাগ। রয়েছে গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টেরোলজিস্ট, চক্ষু বিভাগও। বিল্ডিংয়ের দোতলায় ন’নম্বর ঘরে চলে চক্ষু বিভাগের ওপিডি। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ হঠাৎ চমকে ওঠেন ওই বিভাগের চিকিৎসক। টেবিলে পরে ছিল একটা চোখের লেন্স। সেটা নেই। চক্ষু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওই লেন্সের দাম ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি। যদিও হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ওই যন্ত্রের দাম ১০/১২ হাজারের বেশি নয়। আচমকা সেই যন্ত্র খুঁজে না পাওয়ায় হুলুস্থুল পড়ে যায়। প্রথমটায় চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন অন্য কোথাও রাখা হয়েছে। কিন্তু টানা ৩০ মিনিট খড়ের গাদায় সুঁচ খোজার মতো করে খুঁজেও যখন যন্ত্রটা পাওয়া যায়নি তখনই সতর্ক হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে কি রোগীর পরিবারের কেউ নিয়ে নিল? নতুন ওই ওপিডি বিল্ডিংয়ের দু’টি গেট। দু’টি কোলাপসিবল গেটই বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। রোগীদের বলা হয়, “যে যার ব্যাগ খুলে দেখান।”
[আরও পড়ুন : ইস্তাহারে মমতার মাস্টারস্ট্রোক! দেশে প্রথমবার সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রতিশ্রুতি]
একের পর এক ব্যাগ ধরে শুরু হয় তল্লাশি। রোগীদের মধ্যে কেউ এসেছিলেন কোন্নগর থেকে। কারও বাড়ি কৃষ্ণনগর। ডাক্তার দেখাতে এসে মহাফাঁপড়ে পড়েন তাঁরা। ক্ষুব্ধ রোগীদের প্রশ্ন, “এভাবে গেট বন্ধ করে তল্লাশি অত্যন্ত অপমানজনক। ডাক্তার দেখাতে এসে শেষে চোর বদনাম পেতে হল।” চক্ষু বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে অন্য বিভাগে চিকিৎসক দেখানোর পরিকল্পনা ছিল অনেকের। কিন্তু আচমকা গেট বন্ধ করে তল্লাশিতে তাঁদের সে আশায় জল ঢালতে হয়। বামনগাছির বাসিন্দা শুভঙ্কর ঘোষের কথায়, “চক্ষু বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে বক্ষরোগ বিভাগে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু অকস্মাৎ গেট বন্ধ করে দেন কর্মচারীরা।”
এইভাবে ব্যাগ ধরে ধরে তল্লাশির প্রয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তোলে রোগীর পরিবার। রোগীদের প্রশ্ন, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কেন চোরকে চিহ্নিত করা হল না? এদিকে দীর্ঘক্ষণ গেট বন্ধ থাকায় ব্যহত হয় চিকিৎসা পরিষেবা। ডাক্তার দেখিয়ে ওপিডি বিল্ডিং থেকে বেরোতে পারছিলেন না অগুনতি অসুস্থ রোগী। ক্ষুব্ধ রোগীরা গেট ধরে ঝাঁকাতে শুরু করেন। বাধ্য হয়েই একসময় গেট খুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসএসকেএম হাসপাতাল সুপার পীযুশ রায় জানিয়েছেন, “যন্ত্র চুরি যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে বিশদে বিষয়টি জানি না। যন্ত্র কীভাবে চুরি হল তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”