স্টাফ রিপোর্টার: একধাক্কায় সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি বেতন বৃদ্ধি হল রাজ্যের ১১৩টি জুট মিলের প্রায় আড়াই লক্ষ শ্রমিকের। এটি সর্বকালীন রেকর্ড তো বটেই, জুটমিলের ক্ষেত্রে বলা চলে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হল বুধবার। বাড়ছে সবরকম সুবিধাও। শেষবার ২০১৯ সালে বেতনবৃদ্ধি হয়েছিল, তাও দিনপিছু দুই টাকার মতো। রাজ্যে জুটশিল্প বাঁচাতে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত যে অক্সিজেন জোগাবে, তা বলাই বাহুল্য। ফেব্রুয়ারি থেকেই চালু হবে নতুন কাঠামো। তার আগে অবশ্য আজ, লক্ষ্মীবারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক নিজে।
বুধবার জুটমিলের মালিকদের সংগঠন আইজেএমএ, সেই সংগঠনের বাইরে থাকা জুটমিলের প্রতিনিধি ও সব মিলিয়ে ২৪টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে রাজ্য শ্রম দপ্তরের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। যাঁর উদ্যোগে মূলত এই চুক্তি সেই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক সভাপতিত্ব করেন। তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি তো বটেই, উল্লেখযোগ্যভাবে চুক্তিতে সই করেছে সিটু-সহ সব শ্রমিক সংগঠন। চুক্তির পর তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যো পাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উদ্যোগে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হল। বাম জমানায় ৫০ পয়সা বা এক টাকা মাত্র বেতনও বেড়েছিল, শুধু তাই নয়, বেতন কমানোর নজিরও রয়েছে। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। শ্রমিকদের পরিবারে আরও হাসি ফুটবে, এটাই আনন্দের। বস্তুত, তিনি ও আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি বিধায়ক সোমনাথ শ্যামও চুক্তিপত্রে সই করেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রতিনিয়ত এ ব্যাপারে মনিটরিং করেছেন, সেটাও উল্লেখ করেন ঋতব্রত।
[আরও পড়ুন: অবশেষে মুখ খুললেন ‘কালীঘাটের কাকু’, কণ্ঠস্বরের নমুনা ইডির হাতে, আবার ফেরানো হল এসএসকেএমে]
চুক্তির মূল বিষয় :
১) নতুন যে সব শ্রমিক জুটমিলের কাজে যোগ দেবেন তাঁদের মোট বেতন বা গ্রস স্যালারি হবে মাসিক ১৪,০৬৬ টাকা যা আগের নতুন যুক্ত হওয়া শ্রমিক যা পেতেন তার থেকে প্রায় ৩৫৬২ টাকা বেশি। নতুন শ্রমিক পিছু কোম্পানির খরচ অর্থাৎ সিটিসি বাড়বে ৪৫৫০ টাকা। সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকদের বর্তমান মোট মাসিক বেতন ১৬,৭১৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১৭,২৭১ টাকা। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৫৩ টাকা। ২০১৯ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৩,৫৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৪,১৩২ টাকা হবে। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৫৮৬ টাকা। ২০০২ সালে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট মাসিক বেতন ১৫,২১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১৫,৮৩৭ টাকা। অর্থাৎ মাসিক বৃদ্ধি ৬২৭ টাকা।
২) বর্তমানে জুটমিলের কর্মরত সমস্ত শ্রমিকের অ্যাড হক ১৩০ টাকা অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
৩) সমস্ত ধরনের শ্রমিকদের বাড়িভাড়া বাবদ ভাতা ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে।
৪) আগে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকরা দৈনিক ৫০ পয়সা এবং নতুন শ্রমিক ১৫ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেতেন। নতুন চুক্তির মাধ্যমে সবচেয়ে পুরনো শ্রমিকরা দৈনিক ১ টাকা এবং ন্যূনতম দৈনিক ৪৮৫ টাকা বেতনে নিযুক্ত শ্রমিকরা দৈনিক ২০ টাকা হাজিরা ভাতা পাবেন।
৫) এই প্রথম জুটমিলের শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, অদক্ষ, অল্প দক্ষ, দক্ষ ও বেশি দক্ষ।
৬) এই চার ভাগে সমস্ত শ্রমিকদের কাজের ধরন অনুযায়ী ভাগ করে তাদের নির্দিষ্ট ফিটমেন্ট ভাতা দেওয়া হবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্টেট প্রোডাক্টিভিটি কাউন্সিলের পরামর্শ নিয়ে শ্রমিকদের কাজের বোঝা, গ্রেড ও স্কেল নির্ধারণ করা হবে।
[আরও পড়ুন: সরছে সিআরপিএফ, এবার রামমন্দিরের নিরাপত্তা কার হাতে?]
উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল পর্যন্ত পুরনো চুক্তির মেয়াদ ছিল। রাজ্য তড়িঘড়ি এদিনই চুক্তি কার্যকর করতে উঠেপড়ে নামে। মলয় ঘটক ও ঋতব্রতরা বারবার আলোচনাও করেছেন। এদিনের চুক্তিতে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার তীর্থংকর সেনগুপ্তও। সকাল থেকে বৈঠক হয়। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৯টি ত্রিপাক্ষিক ও একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সব সংগঠনগুলির সই শেষ হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া পাটশিল্প এলাকায়। হুগলি নদীর দুই ধারে বহু জায়গায় আবির খেলতেও দেখা যায় শ্রমিকদের। সব শ্রমিক সংগঠনই স্বাগত জানিয়েছে এই চুক্তিকে।