কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতিতেই পালিত হচ্ছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। হাজারও বিধিনিষেধের মধ্যে পুজোর আয়োজন করতে হচ্ছে। অন্য সব বছরের চেয়ে এবছরের ঝক্কিও তাই কম নয়। তবে পুজো যত বড়ই হোক বা যত ছোট আকারে হোক, মানুষের সুরক্ষাই প্রাধান্য পাচ্ছে সেখানে। সল্টলেকের এফডি ব্লকের (FD Block) পুজো কলকাতার হাই প্রোফাইল পুজোর তালিকায় অন্যতম। করোনা সংক্রমণ এড়িয়ে উৎসবের আনন্দে মাততে এই পুজো কর্তারা অভিনব একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এবছর আর মণ্ডপে নয়, বাড়িতে বসেই দর্শনার্থীদের অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে এফডি ব্লক পুজো কমিটি, নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
এবছর সল্টলেক এফডি ব্লকের পুজোর (Durga Puja) থিম – ফির দেখা শৈশব। শুনেই বোঝা যাচ্ছে কীভাবে মণ্ডপ সাজছে। টাইটানিক, হ্যারি পটারের মতো বেশ কিছু বিখ্যাত থিম গড়ে আগে বহু প্রশংসা কুড়িয়েছে এই হাইপ্রোফাইল পুজো। তবে এবছর তারা বোধহয় অন্য কারণে প্রশংসিত হবে। অঞ্জলি নিয়ে তাঁদের অভিনব ভাবনা। আগে গিয়ে অঞ্জলির লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথম ব্যাচে অঞ্জলি দেওয়ার হুড়োহুড়ি আর এবার নয়। বাড়িতে বসে ভালভাবে, তিথি মেনেই এবার অঞ্জলি দিতে পারবেন সল্টলেকের এফডি ব্লকের বাসিন্দারা। কীভাবে? গোটা পরিকল্পনার কথা জানালেন এফডি ব্লক পুজো কমিটির সভাপতি বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ কঠিন কিছু নয় ব্যাপার। সূত্র – ফেসবুক লিংক। তাতেই ক্লিক করেই কার্যসিদ্ধি।
[আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ, এবছর দর্শকহীন দুর্গাপুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে]
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এফডি ব্লকের আবাসিকদের যে পুজোর সার্কুলার দেওয়া হবে, পুজো কমিটির তরফে, তাতেই থাকবে ফেসবুক লিংক এবং অঞ্জলির সময়সূচি। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী – এই তিনদিন অঞ্জলির সময়ে ফেসবুকের লিংকে ক্লিক করলেই শুনতে পাবেন পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ। ব্যস, হাতে ফুল নিয়ে পুরোহিসের সঙ্গে মন্ত্র পড়ে নিলেই অঞ্জলিপর্ব সমাপ্ত। কিন্তু অঞ্জলির ফুল দেবীর পায়ে সমর্পণ করবেন কীভাবে? তা নিয়েই চিন্তার কিছু নেই। ফুলগুলো জমিয়ে রাখতে হবে বাড়িতেই। প্রতিদিন রাতে কমিটির সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অঞ্জলির সেই ফুল সংগ্রহ করে মণ্ডপে প্রতিমার পদতলে ছুঁইয়ে দেবেন। এখানেই তাঁদের কাজ শেষ নয়। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে এফডি ব্লক পুজো কমিটি। এই ফুলকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কোনও কাজে লাগাতে পারেন, অথবা পরিবেশ বাঁচিয়ে অন্য কোথাও স্তূপীকৃতও করতে পারেন। মোট কথা, অষ্টমীর অঞ্জলি নিয়ে আমজনতার ভাবাবেগকে পূর্ণ সম্মান জানিয়ে এবং তাঁদের সুরক্ষায় অনলাইনে অঞ্জলির ব্যবস্থা করেছে এই পুজো কমিটি।
[আরও পড়ুন: চাপের কাছে নতিস্বীকার, মেডিক্যালে দুর্গাপুজোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চিকিৎসকদের]
বছর কয়েক আগেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান নির্বিঘ্নে অনলাইনে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছিল এক সংস্থা। দূরদূরান্তে থাকা নিকটজনের অন্তেষ্টিতে ভারচুয়ালি অংশ নিতে পারতেন সকলে। এই কাজ যদি ডিজিটাল মাধ্যমে হতে পারে, তবে পুজোর অঞ্জলিই বা নয় কেন? সেদিক থেকে এফডি ব্লকের পুজোর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অভিনব।