এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন সুরুচি সংঘের পুজো প্রস্তুতি৷
স্টাফ রিপোর্টার: দুর্গাপুজো মানে শুধুই তো চণ্ডীপাঠ, মন্ত্রোচ্চারণ, আচার-রীতি মেনে দেবীর আরাধনা নয়, দুর্গাপুজোর ব্যপ্তি বিরাট। বিশ্ব দরবারে ভারতীয় শিল্প-সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেওয়ার সবচেয়ে বড় মঞ্চ। দুর্গাপুজো কখনও শিল্পীকে নতুন করে ভাবায়, তো কখনও দর্শনার্থীদের নয়া সৃষ্টির সাক্ষী করে তোলে। শিল্পী ভবতোষ সুতারের শিল্প ভাবনায় এবারও তাই অন্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে সুরুচি সংঘের পুজো। যে মণ্ডপে পা রেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেবী দুর্গার মমতাময়ী উপস্থিতি অনুভব করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। আর যাঁরা করোনা আতঙ্কে আসতে পারবেন না, তাঁদেরও মন খারাপের কোনও কারণ নেই। তৃতীয়ার গোধূলি লগ্ন থেকেই ঘরে বসে কিংবা বিদেশ থেকেও সরাসরি পুজোর প্রতিটি মাঙ্গলিক কর্মসূচি এবং রীতি-আচার-অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন।
এবছর নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘের থিম, ‘উৎসব নয়, হোক মানুষের পুজো’। অর্থাৎ জাঁকজমক আর আড়ম্বর বর্জন করে এই অতিমারী পরিস্থিতিতে সাধারণের পাশে দাঁড়াতেই বদ্ধপরিকর এই ক্লাব। ইতিমধ্যেই তিলোত্তমার বিভিন্ন ওয়ার্ডের হাজারেরও বেশি কচিকাঁচাদের হাতে পোশাক তুলে দিয়েছেন পুজোর সভাপতি ও পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পুজোর চারটে দিন সকলের মুখে হাসি ফুটলেই তো উৎসবের সার্থকতা। তাই এই প্রয়াস। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজ। জমকালো সাজ কিংবা দামী উপকরণ নয়, উমাকে স্বাগত জানানো হবে একেবারে আটপৌরে ঢঙে। বাঁশ, শাড়ি, কাপড়কেই মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে। আর হাজারো ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে শান্তি রূপেন দেবী দুর্গার কাছে এবার শুধুই শুভ সময়ের প্রার্থনা।
[আরও পড়ুন: সামর্থ্য সীমিত, ইচ্ছাকে সম্বল করেই পুজো প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হাতিবাগানের নামী বারোয়ারি]
প্রতিবারই এ মণ্ডপে থাকে উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। সেই কারেণ বাড়ি বসে সুরুচির পুজো দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথায়, “পুজোর সময় অনেক মানুষ ভিনরাজ্য তথা বিদেশ থেকেও কলকাতায় আসেন সুরুচির পুজো দেখতে। এবছর অতিমারীর কারণে তাঁরা অধিকাংশই আসতে পারবেন না। অনেকে কোভিডের ভয়ে ভিড় এড়াতে সুরুচিতে পা রাখবেন না। সবার কথা ভেবে ২৪ ঘণ্টাই মণ্ডপ থেকে মাতৃবন্দনার প্রতিটি খুঁটিনাটি মুহূর্ত ক্লাবের ফেসবুক পেজ (New Alipore Suruchi Sangha) ও তাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লাইভ’ সম্প্রচার হবে।” চারটি ক্যামেরায় সরাসরি সম্প্রচার হবে ‘নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এবং ‘সুরুচি সংঘ অফিসিয়াল’ ইউটিউব চ্যানেলে।
কোভিড সংক্রমণ রুখতে দর্শনার্থীদের যেমন স্যানিটাইজ ও দশ হাজার মাস্ক বণ্টন করবে সুরুচি, তেমনই ক্লাব সদস্যদের জন্যও নানা গাইডলাইন দিয়েছেন পুজোর সভাপতি। পূর্তমন্ত্রী জানালেন, “শুধুমাত্র ক্লাবের সদস্য ও তাঁদের পরিবারই অঞ্জলি দিতে পারবেন। কিন্তু কোন সদস্য কখন অঞ্জলি দিতে মণ্ডপে আসবেন তা শিডিউল করে দেওয়া হবে। ক’টায় কোন ব্লকের সদস্যরা আসবে তা চার্ট করে জানিয়ে দেবে কমিটি। পৃথক গ্রুপে পৃথক সময়ে মণ্ডপে এসে দূরত্ব মেনে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিতে হবে। বিসর্জনের আগে শুধুমাত্র মহিলারা দূরত্ব মেনে প্রতিমা বরণ করতে পারবেন, কোনও সিঁদূর খেলা চলবে না।” সবমিলিয়ে সুরুচি এবার ভিন্ন স্বাদের খোঁজ দেবে।