সুব্রত বিশ্বাস: বিহার, উত্তরপ্রদেশে করোনায় (Coronavirus) আক্রান্ত মৃতের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে গঙ্গা-সহ অন্যান্য নদীতে। সেই জলপ্রবাহ বাংলাতেও দূষণ ছড়াতে পারে। এই আশঙ্কায় গোড়া থেকেই রাজ্যের নদীগুলিতে নজরদারি বাড়িয়েছে সরকার। তবে চিন্তা দূর হচ্ছে না তাতে। সেই দুশ্চিন্তা এবং তা থেকে রটনার জেরে শনিবার সকালেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল হাওড়ার (Howrah) বেলুড়ে। প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের গঙ্গায় কোভিডে মারা যাওয়া মানুষের মৃতদেহ ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই জল রাজ্যের গঙ্গায় এসে পড়েছে। ফলে তা পান করলে বিপজ্জনক। পান করবেন না এই জল। এ কথা রটতেই এলাকাবাসী প্রবল আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পাড়ার কলে জল নিতে এসেও বালতি ফেলেই অনেকে চলে যান। দোকান থেকে পানীয় জল কেনার হিড়িক পড়ে যায়।
শনিবার সকাল হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন অঞ্চলে। সরকারিভাবে সরবরাহ করা পানীয় জল বিপজ্জনক। গঙ্গার জল থেকে ফিল্টার করে সরবরাহ করা এই জল পান করা যাবে না। এমনই সব কথা রটতে থাকে এলাকায়। বেলা যত গড়িয়েছে, আতঙ্ক ততই তীব্র হয়েছে। রং চড়িয়ে তাকে আরও ঘনীভূত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে পুলিশকে সেভাবে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।
[আরও পড়ুন: খাওয়াতে গিয়ে করোনা রোগীর মৃত্যু! বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কমিশনে মৃতের মেয়ে]
গুজবের খবর শোনার পর হাওড়ার পুলিশ কমিশনার জানান, পুলিশের কাজ নয় এটা। ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ বলেন, ”মিথ্যে রটনা। এর পিছনে নিশ্চয় কোনও অভিসন্ধি রয়েছে। খতিয়ে দেখা হবে তা।” এলাকাবাসীর একাংশের মত, এইসব অঞ্চলে পানীয় জল বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলে। দীর্ঘদিন ধরে একশ্রেণির মানুষ এই ব্যবসায় ফুলেফেঁপে উঠেছে। বালি দুর্গাপুর অঞ্চলে দেড়শো কোটি ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হয়। যা বালি জগাছা ব্লকের আটটি পঞ্চায়েতে জল সরবরাহ করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এই পানীয় জলই ছিল তৃণমূলের নিবাচনী হাতিয়ার। সেই জল সবরাহের উপর আতঙ্ক তৈরি করার পাশাপাশি জল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ফের চাঙ্গা করতে সুকৌশলে এই মিথ্যে রটনা বলে তৃণমূলের ধারণা।
[আরও পড়ুন: কোচবিহারের পর এবার ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ খতিয়ে দেখতে নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন রাজ্যপাল]
বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশিস ঘোষ বলেন, ”এটা একেবারে মিথ্যে এবং অবৈজ্ঞানিক।” ফিল্টার প্ল্যান্টের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কথায়, নিয়মিত জল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হয়। গঙ্গার জল তুলে ছেঁকে, ফিটকিরি দিয়ে ভালোভাবে ফিল্টার করে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করা হয়। সেটাকে ফের ক্লোরিন দিয়ে শোধন করা হয়। তারপরে সরবরাহ করা হয়। গঙ্গার ধারে শ্মশান, কল-কারখানার বর্জ্য, নিকাশি নর্দমার জল, অসংখ্য পশু, মানুষের দেহ ভেসে যায়। সেই জলকে চিরদিন পানযোগ্য করে পান করছেন মানুষ। আজ এই রটনা ও আতঙ্ক দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেছেন তারা।