স্টাফ রিপোর্টার: দিন গড়িয়ে গেলেও টানটান তোশক, বালিশ, চাদর। এতটুকু ভাঁজ পড়েনি তাতে। করোনা (Coronavirus) আতঙ্কে খদ্দেরই যে নেই এশিয়ার বৃহত্তম পতিতাপল্লি সোনাগাছিতে (Sonagachi)। তারই মধ্যে কোনওরকমে রোজগার করছেন গুটিকয়েক।
কীভাবে? যৌনকর্মীদের রোজগারের নতুন পথ এখন ভিডিও কল। ‘ফোন যৌনতা’-র মাধ্যমেই দু’ পয়সা আয় করছেন তাঁরা।
সোনাগাছির দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোভিডের (COVID-19) প্রথম ঢেউয়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল আয়। সে সময় থেকেই অনলাইনে টাকা রোজগারের ফিকির খুঁজতে শুরু করেন অনেকে। তখনই মুঠোফোন যৌনতার (Phone Sex) বিষয়টি সামনে আসে। এই পদ্ধতিতে কাস্টমারকে ভিডিও কল করেন যৌনকর্মীরা। তাতেই শরীর দেখিয়ে যা আয় হয়।
এর জন্য তো কাস্টমারের নম্বর প্রয়োজন। তা কীভাবে মিলছে? মহাশ্বেতার কথায়, যাঁরা পুরনো কাস্টমার, তাঁদের নম্বর যৌনকর্মীদের কাছে রয়েছে। তাঁদেরকেই অনলাইনে পান যৌনকর্মীরা। এমনিতেই খদ্দের বন্ধ এখন। ভিডিওকল করে এভাবেই রোজগার করছেন কেউ কেউ।
[আরও পড়ুন: Lata Mangeshkar: করোনা আক্রান্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, ICU-তে চিকিৎসাধীন]
করোনার ওমিক্রন স্ট্রেন অনেক বেশি ছোঁয়াচে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সোনাগাছির হাতেগোনা জনাদশেক আক্রান্ত হলেও, প্রথম ঢেউয়ে প্রায় একশো যৌনকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এবার যেভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে এখানকার বাসিন্দারাও দ্রুত আক্রান্ত হবেন। শরীর খারাপ হলে টানা ৮/১০ দিন খদ্দের নেওয়া সম্ভবও নয়। পরিস্থিতি বুঝে ইতিমধ্যেই এক অসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে।” প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন করে যৌনকর্মীর হাতে এই ত্রাণ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের সাহায্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় করা হবে বলে দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
ত্রাণের এই বস্তায় রয়েছে পাঁচ কিলো চাল, দু’কিলো ছোলার ডাল, এক কিলো মসুর ডাল, তড়কার ডাল এক কেজি। এর সঙ্গে ধনে, জিরে, লঙ্কাগুঁড়ো, সরষের তেল, চিনি সবই থাকছে বস্তায়। সোমবার সমাজকল্যাণ দপ্তরের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিলি করা হয় সোনাগাছিতে। ছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা।
রবিবারের সন্ধ্যায় এমনিতে গিজগিজ করে সোনাগাছি। কিন্তু বছর শুরুর রবিবারে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট থেকে মসজিদবাড়ি লেনে পিন পড়লেও আওয়াজ শোনা যাবে এমন পরিস্থিতি।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ২০ হাজার খদ্দের সোনাগাছিতে আসেন। রবিবার সংখ্যাটা আরও বাড়ে। শীতের এই সময় তো অবশ্যই। কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে এই মুহূর্তে রাজ্যে ফি দিন ১৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির তথ্য বলছে আপাতত দিনে তিনশো লোকও আসছেন না এশিয়ার সব থেকে বড় যৌনপল্লিতে। কারণ একটাই, সংক্রমণের ভয়।
দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সদস্য বৈশাখী লস্কর জানিয়েছেন, সঙ্গম করার সময় শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা অসম্ভব। স্বাভাবিকভাবে খদ্দেররা ভয় পান। ভয় রয়েছে অগুনতি কর্মীরও। বৈশাখীর বক্তব্য, প্রতিদিন জেলা থেকে সোনাগাছিতে কম করে ১২ হাজার মহিলা যৌনকর্মী কাজ করতে আসতেন। করোনা আতঙ্কে তাঁরাও আর আসছেন না। দ্বিতীয় ঢেউ যখন তুঙ্গে সে সময় সোনাগাছিতে একাধিক হেলপ ডেস্ক খোলা হয়েছিল। যৌনপল্লিতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। মাঝে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ফের তা শুরু করেছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।