shono
Advertisement

Breaking News

‘দেশের জার্সি গায়ে মেসির কৃতিত্বকে সবাই দিব্যি ভুলে যায়’

মারাদোনাই ফুটবলের সেরা জাদুকর। The post ‘দেশের জার্সি গায়ে মেসির কৃতিত্বকে সবাই দিব্যি ভুলে যায়’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:52 PM Sep 09, 2017Updated: 07:22 AM Sep 09, 2017

গৌতম ভট্টাচার্য: কার্লস ভালদেরামা। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ অফিসে আপনাকে স্বাগত!

Advertisement

ভালদেরামা: না, না তার আগে বলি, আমি খুব খুশি কলকাতায় আসতে পেরে। আমার আগে বলা উচিত ছিল ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: কলকাতা সফরে আপনার মুখ্য কাজ হল ২ অক্টোবর দিয়েগো মারাদোনা ম্যাচের জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের নেমন্তন্ন করা। আমাদের কাছে এটা খুব বিস্ময়কর যে আপনি নিজেও একজন সুপারস্টার। তিনটে বিশ্বকাপ খেলেছেন। তিনবার সাউথ আমেরিকান সর্বসেরা ফুটবলার হয়েছেন। অথচ আপনি কিনা আরেকজন সুপারস্টারের জন্য নেমন্তন্ন করে বেড়াচ্ছেন।

ভালদেরামা: তার কারণ ফুটবলে আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে মিশে একটা বিশ্ব পরিবার। আসল কথা হল ফুটবলের প্রচার। তাছাড়া দিয়েগো মারাদোনা একজন ভাল বন্ধু।

প্রশ্ন: ভাল বন্ধু না বিশেষ বন্ধু?

ভালদেরামা: বিশেষ বন্ধু তো নিশ্চয়ই। ওর ফুটবল জীবন আমি শুরু থেকে ফলো করে আসছি। মারাদোনাই সেরা। আর শুধু সেরা নয়। আমার আইডল।

প্রশ্ন: কেন মারাদোনাই সেরা? কেন অন্য কেউ নন?

ভালদেরামা: আমি আসলে খুব কাছ থেকে মারাদোনাকে দেখেছি। আমরা কাছাকাছি বয়সি। ওর যখন বয়স মাত্র ষোলো তখন থেকেই মারাদোনা অসামান্য প্রতিভা। মারাদোনা যখন সতেরো, আর্জেন্তিনার ইয়ুথ টিম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে। অবিশ্বাস্য সব জিনিষ তখন থেকেই ও বল নিয়ে করতো। অনেক প্রতিভা দেখেছি। কিন্তু বল নিয়ে মারাদোনার মতো অবিশ্বাস্যভাবে যা খুশি তাই করতে কাউকে দেখিনি। ও হল কমপ্লিট জাদুকর।

প্রশ্ন: ভালদেরামা আপনি বিশ্বে কলম্বিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ফুটবলার। দেশের হয়ে ১১১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। এত সম্মান পেয়েছেন। পেলের গড়া বিশ্ব একাদশেও আপনি। আচ্ছা, কখনও মনে হয়নি আর্জেন্তিনা বা ব্রাজিলে জন্মালে আরও বেশি প্রচার পেতাম? আরও ভাল টিমে খেলতে পারতাম?

ভালদেরামা: কখনও মনে হয়নি। কলম্বিয়ান হিসেবে আমি খুব গর্বিত। এই দেশ থেকেই বিশ্ব আমাকে চিনেছে। জেনেছে। আর্জেন্তিনীয় বা ব্রাজিলীয় হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই আমার।

প্রশ্ন: নিজের শহর সান্তা মার্টায় ২২ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জ মূর্তি আছে আপনার। কখনও মনে হয় না আমার যা কন্ট্রিবিউশন দেশের রাজধানী বোগোটায় মূর্তিটা বসা উচিত ছিল?

ভালদেরামা: কখনও মনে হয় না। সান্তা মার্টা আমার নিজের শহর। এখানকার মানুষ আর আমার ভক্তেরা তীব্র আকুলতার সঙ্গে আমার মূর্তি বসাতে চেয়ে ছিল। তাই রাজি হই।

প্রশ্ন: আপনিও পেলে-মারাদোনার মতো দশ নম্বর জার্সি পরেছেন। এই দশনম্বর বাছাটা কি আপনাদের পূর্বসূরি পেলের ইনফ্লুয়েন্স?

ভালদেরামা: একেবারেই না। সেই সময় আমাদের কোচ ছিলেন ফ্রান্সিসকো মাতুরানা। উনি আমায় দশ নম্বর জার্সিটা তুলে দিয়ে বলে ছিলেন সব দেশের বেস্ট প্লেয়াররা দশ নম্বর পরে। উরুগুয়েতে ফ্রান্সিস কোলি। আর্জেন্তিনার মারাদোনা। ব্রাজিলে জিকো। আজ থেকে তুমিও এটা পরবে।

প্রশ্ন: কলকাতার ফুটবল ভক্তদের আপনার অনবদ্য প্লে মেকিং ছাড়াও যেটা মনে থেকে গিয়েছে তা হল আপনার ঝাঁকড়া বড় বড় চুল। ওটা আপনার বরাবরের বিশেষত্ব। অথচ আপনি কি জানেন ভারতের বিখ্যাত জাতীয় কোচেদের মধ্যে কেউ কেউ (নইম) মনে করেছেন ফুটবলারের চুল লম্বা রাখাটা অন্যায়। তা হলে তার ফোকাস ভাগ হয়ে অনেকটা চুলে চলে যাবে।

ভালদেরামা: আমার কাছে থিয়োরিটা একেবারে বোধগম্য নয়। হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে ফুটবলের কী সম্পর্ক? যখন ফুটবলার মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে তখন তো তার সমস্ত মনোযোগ ফুটবলেই থাকে। সে তখন চুল নিয়ে ভাবতে যাবে কেন?

প্রশ্ন: কলম্বিয়ার মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ হুড়মুড়িয়ে বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে ঢুকে পড়ল। অথচ ভারত এত বছর ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থেকেও এগোতে পারছে না। ভারতীয় ফুটবলের জন্য আপনার প্রেসক্রিপশন কী?

ভালদেরামা: প্রথমত ফুটবলের সুযোগ সুবিধে যথেষ্ট দিতে হবে। ফুটবল টিচারদের যথেষ্ট জায়গা দিতে হবে যাতে তঁারা শেখানোর সুযোগ পান। প্লাস কোচেদের উপযুক্ত টিচার হতে হবে। তাঁরা নিজেরাই ভুল জানলে প্রবলেম। এই প্রসেসগুলো যদি ঠিকঠাক চলে তা হলে স্পনসর আসবে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে বাচ্চারা স্বপ্ন দেখে বড় ফুটবলার হওয়ার। আর সেই স্বপ্নের সিঁড়িগুলো ঠিকঠাক তৈরি থাকে।

প্রশ্ন: কলম্বিয়ার ফুটবল নিয়ে স্থানীয় ভালবাসা আর ঔৎসুক্যের মধ্যে একটা দুঃখ থেকেই যায়। তা হল আন্দ্রে এসকোবারের হত্যা। ফুটবল ইতিহাসে এমন ট্র‌্যাজিক ঘটনা আর নেই।

ভালদেরামা: (শরীরি ভাষা বদলে দ্বিধাগ্রস্ত) হ্যাঁ, আমাদের দেশের ফুটবলে ওটা খুব সংকটজনক সময় গিয়েছে। চুরানব্বই বিশ্বকাপের পর এসকোবার মারা গেল। তারপর আবার ফুটবল দিয়েই আমরা কলম্বিয়ায় নতুন মেসেজ তুলে ধরি। সেই মেসেজ আর ট্র‌্যাজিক নয়, হ্যাপিনেসের। মানতেই হবে সেই সময়টা খুব কঠিন গিয়েছে।

প্রশ্ন: যখন এসকোবার জুয়াড়িদের গুলিতে মারা যান, আপনি কোথায় ছিলেন? কীভাবে সামলে ছিলেন সেই শক?

ভালদেরামা: (সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে) জীবনে দুর্ঘটনা ঘটে। সেটা মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়। আর সেটাকেই সামলে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। ওটা ছিল আকস্মিক একটা ঘটনা। এর পর কোচ মাতুরানা টিমকে নতুন ভাবে অর্গানাইজ করেন। আবার আমাদের ফুটবল উঠে দাঁড়িয়ে বিশ্বে ফুল ফোটাতে থাকে।

প্রশ্ন: এই যে ফুটবল দুনিয়ায় একটা কথা চলে যে বার্সেলোনায় মেসি যত ভাল আর্জেন্তিনার মেসি মোটেও তা নন। জনপ্রিয় ব্যাখ্যার সঙ্গে আপনি একমত?

ভালদেরামা: একমত নই। ফুটবল হল টিম গেম। বার্সেলোনায় মেসি যে সব প্লেয়ার সঙ্গে পায় তারা স্কিলের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। আর্জেন্তিনা টিমে সেই সাপোর্টিং প্লে নেই। তবু লোকে একটা কথা ভুলে যায়। এই মেসিই আর্জেন্তিনাকে তিনটে ফাইনালে তুলেছে। টিম হয়তো একটাতেও জেতেনি। কিন্তু একা তুলেছে তো? সেটা কেন আমরা ভুলে যাবো!

প্রশ্ন: মেসি নিয়ে আপনি এত উচ্ছ্বসিত। মেসি—মারাদোনা তুলনা কীভাবে করবেন?

ভালদেরামা: অনেক মিল আছে। দু’জনের বল স্কিল একইরকমের। দু’জনেই উইথ দ্য বল দারুণ স্পিড তুলতে পারে। মারাদোনা চরিত্র হিসেবে অনেক আকর্ষণীয়। রিয়্যাল লিডার। যে টিমকে চার্জ করে দিতে পারে। রিয়্যাল ক্যারেক্টর। আমি দিয়েগোকে হাল্কা এগিয়ে রাখব।

প্রশ্ন: ব্রাজিল যখন গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ১—৭ হারল তখন একজন নামী দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলার হিসেবে আপনার লজ্জা হচ্ছিল না? এতে তো ইউরোপের কাছে লাতিন আমেরিকার অহং চূর্ণ হয়ে গেল।

ভালদেরামা: খুব আপসেট হয়ে পড়েছিলাম আমি। খুব খুব দুঃখের দিন ছিল। তবে কী জানেন? ওইরকম দুর্ঘটনা হাজারে একদিন হয়। ফুটবলের বিউটিই হল কখনও কখনও অঘটন তৈরি করে দেওয়া।

প্রশ্ন: আপনি কি জানেন কলকাতা শহরে লাতিন আমেরিকান ফুটবলের জন্য কী পরিমাণ আবেগ লুকিয়ে রয়েছে? এখানে কলম্বিয়া বিশ্বকাপে হেরে গেলে। ব্রাজিল বিদায় নিলে। বা রেফারি আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে অন্যায় পেনাল্টি দিলে বাঙালি ভেঙে পড়ে।

ভালদেরামা: এখানে আসা থেকে সাধারণ মানুষের প্যাশন দেখে তাই মনে হচ্ছে। অনবদ্য! তবে যে শহরে মানুষের ফুটবল দেখার জন্য এক লাখ কুড়ি হাজারের স্টেডিয়াম বানানো থাকে, সেখানে এই আবেগ সহজবোধ্য।

প্রশ্ন: ফুটবল ছেড়ে দিয়েও আপনার ফুটবল থেমে যায়নি। আজও বিশ্বব্যাপী ঘুরে চলেছেন। প্রদর্শনী ফুটবল খেলছেন। কী পেতে চান বাকি জীবন থেকে?

ভালদেরামা: জীবন চাখতে চাই। এনজয় করতে চাই। আর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে চাই ফুটবলের মধ্যে।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন, আপনার আর আপনার স্ত্রীর হেয়ারস্টাইল অনেকটা একই ধরনের। এটার রহস্য কী?

ভালদেরামা: (কলম্বিয়া থেকে আসা দোভাষীর কাছে প্রশ্নটা শুনেই স্ত্রী হাত দিতে শুরু করলেন ভালদারামার চুলে। ঘনিষ্ঠ হয়ে এলেন) কোনও রহস্য নেই। আমরা বহুদিন থেকে একে অপরকে চিনি। আর ভালবাসি (এবার আবেগাল্পুত স্ত্রী জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া শুরু করলেন ভালদারামাকে)।

The post ‘দেশের জার্সি গায়ে মেসির কৃতিত্বকে সবাই দিব্যি ভুলে যায়’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement