স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে রাজ্যের সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথম দিন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। সেই তালিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় জেলার। সূত্র মারফত এ খবর পাওয়া গিয়েছে।
উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের সংঘাত পৌঁছয় দেশের শীর্ষ আদালতে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একটি গাইডলাইন বেঁধে দেয়। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার ও রাজভবনের সহমতের ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগের কথা বলে আদালত। এর পরই রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে তৎপরতা শুরু করে দেয়। স্থায়ী উপাচার্যের জন্য চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আবেদন গ্রহণ করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর। প্রায় আড়াই হাজারের মতো আবেদন জমা পড়ে বলে সূত্র জানাচ্ছে। এর মধ্যে ৫০০ জনকে স্থায়ী উপাচার্যের জন্য বাছাই করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ইউ ইউ ললিতকে সার্চ কমিটির প্রধান করা হয়। এছাড়াও সার্চ কমিটিতে রাখা হয় রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি, রাজ্যপালের প্রতিনিধি ও ইউজিসি-র প্রতিনিধিদের। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পৃথক পৃথক সার্চ কমিটি গঠন করা হয় বলে জানা গেছে।
সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করায় জোর তরজা শুরু হয়। ইনিই প্রথম রাজ্যপাল, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা না বলেই বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন। যা নিয়ে উচ্চশিক্ষায় এক জটিলতা তৈরি হয়। সাধারণত রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সহমতের ভিত্তিতে উপাচার্য নিয়োগ হয়ে আসছিল। বর্তমান রাজ্যপাল দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই রীতিই বজায় ছিল। প্রথমবার দেখা যায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা না বলেই রাজ্যপাল একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। অতি উৎসাহী হয়ে রাজ্যপাল এহেন নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বেশ কিছু কাজেও রাজ্যপালকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে। শেষে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেই উপাচার্য নিয়োগের পাশাপাশি বেশ কিছু গাইডলাইন বেঁধে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত।
এদিকে রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় প্রশাসনিক কাজ ও পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগে শামিল হয়েছিলেন অধ্যাপকরা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অ্যাকাডেমি কাউন্সিল, ডিন নির্বাচন থমকে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। সেই অব্যবস্থা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সুস্থিতি ফিরিয়ে আনতে অবশেষে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের পথে হাঁটতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার।